মেঘনা ব্যাংকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীর নামে থাকা মেঘনা ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে এসব শেয়ার কেনা হয়েছে—এমন প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শেয়ার অবরুদ্ধ হওয়া অন্য দুজন হলেন—সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং রনির স্ত্রী মেঘনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ইমরানা জামান চৌধুরী।
সিআইডির অনুসন্ধান অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যক্তিগত হিসাব এবং 'স্টেডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড' নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০টি শেয়ার কিনেছিলেন। শেয়ার কেনার সময় এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে স্টক ডিভিডেন্ড যোগ হয়ে বর্তমানে শেয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫টিতে।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ সম্পদ গড়েছেন। এই অর্থের একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয় এবং পরে তা আবার দেশে এনে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়।
অর্থ পাচারের বিষয়ে সিআইডি জানায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে মোট ২ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার দেশে আনা হয়। অভিযুক্তদের সহযোগী আবুল কাসেমের মাধ্যমে এই অর্থ ইউসিবি ব্যাংক ও এনআরবিআইসি ব্যাংকের এফসি অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
পরবর্তীতে ইমরানা জামান চৌধুরী এবং স্টেডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেডের নামে নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৬০ কোটি টাকা জমা করা হয়। ওই অর্থ পরে কমিউনিটি ব্যাংকের একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় করে মেঘনা ব্যাংকের শেয়ার কেনা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, 'স্টেডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড' নামের প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপল পালকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং নাসিম উদ্দিন মোহাম্মদ আদিলকে পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিআইডি জানায়, তাঁরা দুজনই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মচারী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এসব শেয়ার জব্দের আদেশ দেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন এবং এই প্রক্রিয়ায় জড়িত অজ্ঞাত অন্যদের শনাক্ত করতে সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
