গণতন্ত্রের কথা বলা লোকেরাই এখন স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন: সারা হোসেন
একসময় যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন, তারাই এখন স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুন নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে 'দমনমূলক' পথে হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি প্রশ্ন তুলেন, যারা একসময় গণতন্ত্রের কথা বলতেন, তারাই আজ মিমার ও কার্টুনিস্টদের বিরুদ্ধে মামলা করে কেন দমনমূলক পথে হাঁটছেন?
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুন: মতপ্রকাশ নাকি মর্যাদাহানি?' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক কোয়ালিশন ও স্যাটায়ারভিত্তিক ওয়েবসাইট ইয়ার্কি যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও ডিবি অফিসে গিয়ে আলাপ করে এসে মামলা করা কি স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া? কাদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং কেন? মামলা করে ভয় দেখানো হচ্ছে যে তোমাকে কোর্ট দেখানো হবে, তার আগে জেল দেখানো হবে।'
এজাহার থেকে নাম বাদ দেওয়ার আইনি বৈধতা নিয়ে তিনি বলেন, 'পত্রিকায় খবর এসেছে এজাহার দাখিল করার পর সেখান থেকে 'ইয়ার্কি'র নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো, সেই আইনি প্রক্রিয়া আমি বুঝতে পারছি না। যিনি (ডাকসু ভিপি) মামলা করেছেন, তিনি যদি এজাহার থেকে নাম কাটানোর এই 'বিশেষ প্রক্রিয়া'টি সবাইকে জানিয়ে দেন তবে মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী হাজারো মানুষ রেহাই পেতেন।'
আলোচনায় স্যাটায়ার লেখক শিমু নাসের অভিযোগ করেন, মিমারদের বিরুদ্ধে মামলাটি বাদী ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে করেননি। তিনি বলেন, 'তিনি (বাদী) সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই হয়রানিমূলক মামলাটি করেছেন। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে একজন দলীয় লোক একদল মিমারদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন, এটা খুবই উদ্বেগজনক।'
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, 'যারা ক্ষমতাবান, তাদের চিন্তার সঙ্গে না মিললেই দমন করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এই 'সিলেক্টিভ' প্রয়োগ সমাজের জন্য বিপজ্জনক। ভুল ধরিয়ে দেওয়া বা ফিডব্যাক মেকানিজম একটি সিস্টেমকে শাণিত করে। প্রশ্ন করার জায়গা বন্ধ করে দিলে একটি 'সিস্টেমিক গলদ' তৈরি হবে।'
জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট মেহেদী হক বলেন, 'বলা হয়, সহনশীলতা বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ প্রকাশ। যাদের বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্স কম, তারাই কার্টুন বা স্যাটায়ারে দ্রুত সংক্ষুব্ধ হন। গণতন্ত্র বা সভ্যতার অন্যতম নির্দেশক হলো সে দেশের শাসকরা বা রাজনীতিবিদরা কার্টুন বা স্যাটায়ার কতটুকু সহজভাবে নিতে পারছেন।'
অনুষ্ঠানে ইয়ার্কির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান বর্ষীয়ান কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। তিনি বলেন, 'আমাদের চারদিকে অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তার মাঝেও হাসতে হবে কারণ হাসি খুব জরুরি।'
লেখক ও সংগঠক ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'যাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে নারীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি নোংরা আক্রমণের অভিযোগ আছে, আজ তারাই মামলা করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের নারীরাই নারী, বাকি নারীরা নারী না।'
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে অনলাইনে অপপ্রচার ও নারী নেত্রীদের সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে বেশ কিছু পেজ ও আইডির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম।
মামলার এজাহারে মোট ৯টি ফেসবুক পেজ ও ৩টি ব্যক্তিগত আইডির নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্ত পেজগুলো হলো- 'ডাকসু কণ্ঠস্বর', 'বঙ্গগ্রাফ', 'আমার ডাকসু', 'দ্য ন্যাশনালিস্ট ডেটা', 'কাঁঠেরকেল্লা', 'রৌমারি', 'ডিইউ ইনসাইডার্স', 'বটজিপিটি' ও 'ইয়ার্কি'। এছাড়া এনামুল হক শান্ত, আশিকুর রহমান ও সাইফ আল মাহমুদ নামের তিনটি ব্যক্তিগত আইডিকেও আসামি করা হয়।
তবে পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে স্যাটায়ারধর্মী পেজ 'ইয়ার্কি'র নাম এজাহার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
