ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি: ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি, রোববার চূড়ান্ত বৈঠক
ব্যবসায়ীদের একতরফাভাবে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, দাম বাড়ানোর বিষয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের দাম আদতে কত বাড়বে, তা নির্ধারণে আগামী রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফের বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। তবে দীর্ঘ আলোচনা ও দরকষাকষির পরও উভয় পক্ষ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো যাবে না। তবে এই বাড়তি দাম কমিয়ে কত নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। ফলে রবিবার আরেক দফা বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী, টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার।
বৈঠক শেষে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম সংবাদমাধ্যমকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে দাম কমাতে বলা হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতটুকু না বাড়ালেই নয়, সেটুকুই দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই তাদের পক্ষে নতুন করে আর দাম কমানোর সুযোগ নেই।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন 'বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি মেনুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন'-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় অ্যাসোসিয়েশন। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর ট্যারিফ কমিশন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয় প্রতি লিটারে মাত্র এক টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়।
তবে অ্যাসোসিয়েশন সরকারের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। তাদের যুক্তি ছিল, খোদ ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণেই অন্তত ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যদিও মন্ত্রণালয়ের ধারণা ছিল, কমিশনের বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকতে পারে। সে সময় ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়ালেও কয়েক মাস ধরে দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
পরবর্তীতে গত ১০ নভেম্বর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয় অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে বলা হয়, আইন অনুযায়ী সমিতি সময়ে সময়ে ভোজ্যতেলের মূল্য যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবে হ্রাস-বৃদ্ধি করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং অক্টোবরের এলসি, এনবন্ড ও এক্স-বন্ড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৪ নভেম্বর থেকে নতুন দাম কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
নতুন ঘোষিত দরে সমিতি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করে। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৯ টাকা ও পাম অয়েল ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই বাড়তি দাম অনুমোদন না করলেও গত কয়েকদিন ধরে কোম্পানিগুলো লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে তেল বিক্রি শুরু করে।
এ বিষয়ে গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, 'তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্রিত হয়ে দাম বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন, এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।'
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই বৈঠকে বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো, যা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
