দেশে অনেক সংস্কার হয়, কিন্তু জনগণ ফল পায় না: আমীর খসরু
সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াকে 'বোকার কাজ' ও 'নির্বুদ্ধিতা' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দেশে অনেক সংস্কার হয়, কিন্তু জনগণ এর ফল পায় না। কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ না করে বাজারকে বাজারের মতো চলতে দেওয়া উচিত।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত ৪ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে 'কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার' শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএজেএফের সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'কৃষিতে ভালো করেছি, কিন্তু বিপ্লব হয়নি। কৃষির বিশাল পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখানে বিপ্লব সম্ভব। কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান বোকার কাজ করছে। কৃষকের পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া নির্বুদ্ধিতা। কৃষককে সাহায্য করতে চাইলে অন্যভাবে সহায়তা দিতে হবে। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দেওয়া উচিত।'
খাদ্য নিরাপত্তা ও আমদানির বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'খাদ্য আমদানি নির্ভরতা কমাতে না পারলে বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার হতে হবে। অনেক দেশ হঠাৎ করে কোনো একটি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, আবার কেউ ট্যারিফ আরোপ করে। তাই খাদ্যে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। শষ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং করতে হবে। কোন অঞ্চলে কোন ফসল উৎপাদন করব, বাংলাদেশের কৃষিতে তার একটি ম্যাপ দরকার। যেখানে যে সম্ভাবনা আছে, তা খুঁজে বের করে অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।'
নীতি বাস্তবায়নের সংকট তুলে ধরে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, 'কৃষি খাতে নীতি আছে, কিন্তু নীতি বাস্তবায়ন করার মানুষ কম। দেশে অনেক সংস্কার হয় কিন্তু জনগণ ফল পায় না। কৃষকের ফসল যেন পচে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে প্রক্রিয়াজাতকরণে জোর দিতে হবে। কৃষিতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দরকার।'
দলের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, 'দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান কৃষিতে। আমরা ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যার অন্যতম একটি খাত কৃষি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জিয়াউর রহমানের স্লোগান ছিল—উৎপাদনের রাজনীতি। তখন তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে তিনি দেশের কৃষিকে রফতানির দিকে নিয়ে গেছেন। সেচের জন্য গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে গেছেন। তখন বিদেশে চাল রফতানি হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে দেশের কৃষিকে আরও এগিয়ে নেব।'
তিনি আরও বলেন, 'কৃষির সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত ও এনজিওগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে অ্যালায়েন্স করতে পারলে এগ্রিকালচারে রেভুলেশন আনতে পারব। শুধু কৃষক নয়, গ্রামের কামার-কুমোররাও ভালো দাম পায় না। কৃষকসহ সর্বক্ষেত্রে ইন্ট্রিগ্রেশন করতে হবে এবং কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের সাথে সংযোগ ঘটাতে হবে।'
বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বিরোধী দলে থাকলেও দেশের উন্নয়নে আমাদের কথা চলতে থাকবে। যত রিফর্ম হয়েছে, তা বিএনপির সময়েই হয়েছে। বিএনপি অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি এতদিনে ডাবল ডিজিট হয়ে যেত। আমরা সহনশীল আচরণ করছি। তবে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে দেশ এগোবে না।'
উল্লেখ্য, চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, লাল তীর সিডস লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন–বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
