অনুষ্ঠিত হলো মক ভোটিং: ব্যালটে যেভাবে থাকছে গণভোটের প্রশ্ন
আসন্ন গণভোটে চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হবে একটিমাত্র প্রশ্নের মাধ্যমে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত মক ভোটিং কার্যক্রম চলাকালীন যে ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ চারটি বিষয়কে একত্রিত করে ভোটারদের কাছে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' ভোট চাওয়া হবে।
আজ সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটের মহড়া হিসেবে মক ভোটিং শুরু হয়। বেলা ১২টা পর্যন্ত এই ভোট চলার কথা রয়েছে। নারী-পুরুষ মিলে মোট ৫১০ জন ভোটার এতে অংশ নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গণভোটে 'হ্যাঁ' জয়ী হলে বাংলাদেশের আগামী সংসদ ব্যবস্থা ও সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায় আসবে আমূল পরিবর্তন। গণভোটে 'হ্যাঁ' জয়ী হলে আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। এছাড়া সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে [পিআর পদ্ধতি] ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
ব্যালটে যা থাকছে
নির্বাচনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজকের মক ভোটে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারে একটি প্রশ্নের বিপরীতে চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো:
ক. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ইসি: জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে।
খ. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ: আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধন করতে হলে এই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ. জুলাই সনদের ৩০ দফা: সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া ৩০টি প্রস্তাব বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. অন্যান্য সংস্কার: জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
ব্যালট পেপারে এই চারটি পয়েন্টের নিচে 'হ্যাঁ' এবং 'না' ঘর থাকবে। ভোটাররা এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে করা একটিমাত্র প্রশ্নেই সিল দিয়ে তাদের চূড়ান্ত মতামত জানাবেন।
এ বিষয়ে মক ভোটিং পরিদর্শন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'গণভোটে চারটি প্রশ্ন থাকলেও ভোট হবে "হ্যাঁ" বা "না"—আইন অনুযায়ী প্রশ্নগুলো একসঙ্গে বান্ডেল করা। এক-দুটো প্রশ্নে হ্যাঁ, বাকি প্রশ্নে না—এ রকম পৃথক অপশন নেই। এটা রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত।'
গণভোটের বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে ব্যাপক প্রচারণায় নামছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, 'মানুষ জানল কি জানল না—তা প্রচারণা শুরু হলেই বোঝা যাবে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই মিলে গণভোটের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাব।'
এ সময় তিনি গণমাধ্যমকেও গণভোটের বিষয়বস্তু বা ইস্যুগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
