নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হবে ৩ ভাগে: ইসি সচিব
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত প্রস্তুতিমূলক বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
ইসি জানিয়েছে, সামগ্রিক নির্বাচন প্রস্তুতি এবং বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা প্রসঙ্গে ইসি সচিব জানান, স্থায়ী (স্ট্যাটিক) মোতায়েন- কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মী এবং বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বা অস্থায়ী চেকপোস্ট (যার মধ্যে মোবাইল চেকপোস্টও অন্তর্ভুক্ত) থাকবে। মোবাইল ইউনিট- এ ইউনিটগুলো ঘুরে ঘুরে নজরদারি করবে। একটি ইউনিট কতগুলো কেন্দ্র দেখবে, তা সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের বিবেচনায় (ভৌগোলিক অবস্থান, সড়ক সংযোগ ইত্যাদি) ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় রিজার্ভ- এটি প্রধান রিজার্ভ শক্তি হিসেবে প্রস্তুত থাকবে। এছাড়াও, স্ট্রাইকিং ফোর্স দ্রুত চলাচলের ক্ষমতা ও প্রতিরোধমূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুত থাকবে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং পূজার সময় ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও কাজে লাগানো হবে।'
দায়িত্ব বণ্টন ও তদারকি প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা দিকটি তদারকির মূল দায়িত্বে থাকবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা অন্যান্য বারের মতই নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা (কীভাবে কী কাজ করবেন, কী করবেন না) প্রদান করবে। সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ এবং সমন্বয় দেখবে নির্বাচন কমিশন। এ কাজের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হবে। সেলের আকার বা প্রতিনিধির সংখ্যা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চূড়ান্ত না হলেও, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া সংখ্যার ভিত্তিতে সমন্বয় করা হবে।'
অপপ্রচার রোধে ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অপতথ্য সংস্কৃতি থেকে মুক্ত থাকতে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করা হবে। এ সেলে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ে সক্ষম এজেন্সিগুলোর সাথে সমন্বয় করা হবে।'
যোগাযোগ কৌশল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনার বিষয়ে সচিব জানান, যোগাযোগ কৌশলে দ্বিমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। অর্থাৎ, কেবল ওপর থেকে নিচে নির্দেশনা যাবে না; গ্রাউন্ড লেভেল বা তৃণমূল থেকেও তথ্য ওপরে আসবে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে।
বৈঠকে নির্বাচনের মাঠের চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, 'সবসময় একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে একইসঙ্গে দুই-তিনটি জায়গায় সমস্যা হলে তা মোকাবিলা করা যায়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের মত সীমিত নেটওয়ার্কের স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা সেবাদাতাদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। বডি-ওন ক্যামেরার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসীদের নজরদারি করে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনতে হবে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রও পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।'
মাঠ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, 'মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং তারা তা প্রয়োগ করবেন। সেই সাথে বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের জন্য এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও ডাক বাছাই কেন্দ্রে দ্বিগুণ নিরাপত্তা রাখতে হবে। বাছাই থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো, সংরক্ষণ ও গণনা সব পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'
রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে যেন কোনো আপ্যায়ন গ্রহণ না করেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের সংকট মোকাবিলায় দপ্তরের যানবাহন অধিগ্রহণ বা ভাড়ায় সংগ্রহের বিষয়ে বাহিনী বাস্তবসম্মত সমাধান দেবে।'
সবশেষে আখতার আহমেদ বলেন, 'প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা জরুরি। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বাহিনী না থাকায় বৈঠকে সমস্ত বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরই নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়েছে। বাহিনীগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রথম দিন থেকেই মাঠে কাজ শুরু করবে। যদিও কোনো বাহিনী নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেনি, তবে তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন।'
