প্রশাসনের আশ্বাসে প্রতীকী বন্দর অবরোধ প্রত্যাহার শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া এবং নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল ইজারা দেয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে বন্দরের দুই প্রবেশ পথে প্রতীকী অবরোধ দিয়েছে শ্রমিক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কয়েকশ শ্রমিক নগরীর পোর্ট কানেকটিং রোডের বড়পোল এলাকা ও টোল রোড এলাকায় বুধবার সকাল ১০ থেকে এই কর্মসূচি পালন করছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তা সমাপ্তি ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতারা।
চট্টগ্রাম ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের আহ্বায়ক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, প্রশাসনের আশ্বাস অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর হাই কোর্টে বিচারাধীন রিট মামলার রায়ের পর সরকারের গতিবিধির উপর নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ একটি প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন বড়পোল এলাকায় যানচলাচলে তেমন একটা বিঘ্ন না ঘটলেও টোল রোড এলাকায় বন্দরমূখী কয়েকশ ভারি যান আটকে গিয়ে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার মত যানচলাচল বন্ধ ছিল এই সড়কে। সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, অবরোধের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি বন্দরের কার্যক্রমে।
এর আগে, অবরোধের অংশ হিসেবে চলা বড়পোল এলাকায় চলা সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড শাহ আলম বলেন, ১৯৯৭ সালে একবার বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে আমরা তা প্রতিরোধ করেছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ইজারা দেয়ার কোন এখতিয়ারই নেই। সরকার যদি বন্দর বিদেশিদের ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল না করে জেলায় জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশে নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। এই বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯৩ শতাংশ হয়ে থাকে। যেসব দেশের এরকম একাধিক বন্দর আছে তারা বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে পরিচালনার দায়িত্ব দিলেও তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু, বাংলাদেশের বন্দর এই একটিই। এই বন্দর বিদেশিদের হাতে চলে গেলে পুরো দেশের অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়বে।
স্কপ নেতা এস কে খোদা তোতন বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দর তার সক্ষমতার প্রায় দেড়গুণ পণ্য খালাস করছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি আয় করায় শ্রমিকদের ১ লাখ টাকা করে দিয়েছে। তাই লাভজনক এই বন্দর কেন বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে?"
আরেক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, আমরা গত ছয় মাস ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকার আমাদের কোন কথাই শুনছে না। গত রোববার বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি দায়সারা বৈঠক করে আমাদের জানিয়েছে এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত তাদের কিছু করার নাই।
তিনি বলেন, আমাদের আজকের কর্মসূচি প্রতীকী। আমরা অবরোধ করতে চাইলে সকাল থেকেই করতাম। আমরা সরকারকে একটা বার্তা দিতে চাই। এনসিটি ইজারার প্রক্রিয়া বাতিল না করলে আমরা হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
