সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক কার্জনকে হাইকোর্টের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন। এর ফলে তার কারামুক্তিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মো. রাশেদুজ্জামান রাজা ও বিচারপতি মো. রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী আলী আহমেদ খোকন।
এর আগে একই মামলায় গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে 'আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান' শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে 'মঞ্চ ৭১' প্ল্যাটফর্ম। তবে সকাল ১১টার কিছু পর ওই আলোচনা সভা 'জুলাই যোদ্ধাদের' প্রতিরোধের মুখে পণ্ড হয়ে যায়।
এ প্ল্যাটফর্মের সমন্বয় করছিলেন গণফোরামের নেতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বীর প্রতীক) ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। বৃহস্পতিবারের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গণফোরামের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেনের। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আলোচনা সভায় বক্তারা 'জয় বাংলা' স্লোগান দেন এবং জুলাই আন্দোলনের 'সমালোচনা করে বক্তব্য' দেন।
আলোচনা সভার এক পর্যায়ে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ ১৬ জনকে 'জুলাই যোদ্ধা' ব্যানারে একদল জনতা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন। তিনি আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ জামিন চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠান।
মামলার বিবরণে যা বলা হয়েছে
সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬(২)/৪(১)/৬(২)/১২ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট সকাল ১১টায় মামলার বাদী (পুলিশ পরিদর্শক) দেখতে পান যে, রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটোরিয়ামে কিছু লোক ঘেরাও করে 'আওয়ামী ফ্যাসিস্ট' বলে স্লোগান দিচ্ছে এবং সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বক্তব্য দিচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট 'মঞ্চ ৭১' নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যার উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও বিকৃতি বন্ধ করা এবং জনগণের সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিসহ আরও ৭০-৮০ জন অংশগ্রহণ করে। পরে পুলিশ আসামিদের হেফাজতে নেয়।
উপস্থিত লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (৭৫) 'মঞ্চ ৭১'-এর ব্যানারকে পুঁজি করে প্রকৃতপক্ষে দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করতে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও উপস্থিত অন্যদের প্ররোচিত করে বক্তব্য প্রদান করছিলেন। তার এই ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্যের জন্য উপস্থিত লোকজন তাদেরকে ঘেরাও করে 'আওয়ামী ফ্যাসিস্ট' বলে স্লোগান দিচ্ছিল। আসামিরা পরস্পর সহায়তাকারী হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনার অপরাধ করেছেন।
মামলাটি তদন্তাধীন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করে পুলিশ।
