ভূমিকম্পে গাজীপুরের দুই কারখানায় হুড়োহুড়ি, আহত দুই শতাধিক শ্রমিক
গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী ও জেলার শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে কারখানা থেকে বের হতে গিয়ে দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হলে টঙ্গীর বিসিক এলাকার ফ্যাশন পালস লিমিটেড এবং শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের ডেনিম্যাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও টঙ্গীর ফ্যাশন পালস লিমিটেডে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। ভূমিকম্প শুরু হলে নয়তলা ভবনের প্রায় সব শ্রমিক একসঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে কারখানার ভেতরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ সময় জরুরি নিরাপত্তা গেট বন্ধ থাকায় পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হন। পরে আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান এনি বলেন, "ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পর থেকেই পোশাক কারখানার কয়েকশ শ্রমিক চিকিৎসা নিতে আসেন। এখনো অনেকে আসছেন। একজন শ্রমিকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।"
ঘটনার পর হাসপাতালপ্রাঙ্গণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউই এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, শ্রীপুরের ডেনিম্যাক কারখানার সাততলা ভবনে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ভূমিকম্পের সময় ভবন কাঁপতে শুরু করলে শ্রমিকেরা একসঙ্গে নিচে নামতে গিয়ে অনেকে সিঁড়িতে পড়ে যান এবং অনেকে সিঁড়ি ও দেওয়ালে ধাক্কা লেগে আহত হন। এ সময় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
কারখানার শ্রমিক মনির হোসেন বলেন, "হঠাৎ ভূমিকম্প হওয়ায় সবাই হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন। কিন্তু প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। শ্রমিকেরা ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে হঠাৎ ফটক ভেঙে পড়ে, তখন নিচে থাকা শ্রমিকেরা তাতে চাপা পড়ে আহত হন।"
আরেক শ্রমিক বলেন, "হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে নামতে গিয়ে অনেকেই সিঁড়িতে পড়ে যান। নারী শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন।"
কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা মহিদুল হাসান বলেন, "নিরাপত্তাপ্রহরীরা ফটক বন্ধ করেছিলেন। এর বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়। অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন।"
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, "হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি করে নামতে গিয়ে বহু শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।"
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, "আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা–সংক্রান্ত সব ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে।"
