জামায়াত, এনসিপিসহ ৭ দলের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন কমিশন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) ছয়টি দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংলাপে অংশ নেওয়া ছয়টি দল হলো— বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএজেএমপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
এই সংলাপে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছেন— সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়া, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছেন— দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
এছাড়াও উপস্থিত আছেন— গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ অন্যান্যরা।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের
সংলাপে উপস্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন,'আমরা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি প্রকাশ করেছি। সুন্দর নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি পরিপালন গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আপনারা নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলবেন। আপনাদের দলীয় প্রার্থীরা যেন আচরণবিধি মানে, সেটা আপনারা দেখবেন। কীভাবে সবাই মিলে সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দিব, সেই সহায়তা আপনাদের চাই।'
তিনি বলেন, 'আজকের মূলত আলোচনাটা কিন্তু অনেক উদ্দেশ্য থাকলেও, মূল উদ্দেশ্য আমাদের দুটো। একটা হচ্ছে যে, আমরা একটা আচরণবিধি ফাইনাল করেছি। এটার পরিপালন নিয়ে একটু আলোচনা করা। আর দ্বিতীয়ত, আপনাদের সহযোগিতা চাওয়া।'
সিইসি বলেন, 'শুধু নির্বাচন কমিশন একা নয়, আপনারা সবাই কিন্তু জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ একটা সুন্দর ক্রেডিবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। আপনারাও ওয়াদাবদ্ধ। আমি কাউকে শুনি নাই যে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই না এমন কোনো বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক দল দেয় নাই। সবাই কিন্তু একটা সুন্দর গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনের জন্য জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক। আপনারা তো দেশের জন্য রাজনীতি করেন, দেশের কথা ভাবেন, দেশের মঙ্গলের জন্য মঙ্গল কামনা করেন—এই বিশ্বাস আমাদের আছে।'
সিইসি আরও বলেন, 'আচরণবিধি প্রস্তুত করাটা বড় কাজ নয়। আচরণবিধি পরিপালনটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এটা সুন্দর নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি পরিপালনটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই আচরণবিধি পরিপালনে তাদের এক্সপেক্টেড রোলটা প্লে করবেন। এটিই হচ্ছে আমাদের একটা প্রত্যাশা।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন তো ভোটারদেরকে নিয়ে নির্বাচন। যেহেতু আমরা সবাই জানি যে আমাদের দেশের ভোটাররা একটু ভোট বিমুখ হয়ে গিয়েছিল গত ১০-১৫ বছরে, ভোট কেন্দ্রবিমুখ। ভোট দিতে আসতে চায়নি। চিন্তা করত যে, হয়তো আমি যাওয়ার আগে আমার ভোটটা কেউ না কেউ দিয়ে দিবে হয়তো। আর ফলাফল তো ডিসাইডেড, ভোট দিয়ে কি হবে? এ ধরনের একটা মানসিকতাগুলো গড়ে উঠেছিল ভোটারদের মধ্যে।'
নাসির উদ্দিন বলেন, 'আপনাদেরকে অনুরোধ করব আপনারা জাতীয় নেতৃবৃন্দ, পলিটিক্যাল লিডাররা যারা সরাসরি তৃণমূলের সাথে যাদের সম্পর্ক; তৃণমূল আপনাদের বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়, সরাসরি প্রভাবিত হয়। তাই আপনারা জনগণকে একটু উদ্বুদ্ধ করবেন আশা করি। যাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসে এবং এরকম ব্যাপক সংখ্যায় আসে। আমরা চাই সবাইকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে। চাই একটু এটা আপনারা একটু ভূমিকা রাখবেন। আমরা সেই আশাটা করি।'
সিইসি বলেন, 'আর আপনাদের দলীয় যারা ক্যান্ডিডেট থাকবেন তারা যাতে আচরণবিধিটা পরিপালন করেন সেটা একটু আপনারা দেখবেন। এখানে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যদি আমরা আচরণবিধি মানি—আমরা অতীতে এরকম দুই তিনটা নির্বাচন দেখেছি—আমাদের দলগুলো কিন্তু ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাইতেও বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে রাজনৈতিক দল এবং ক্যান্ডিডেটদের এই আচরণী পরিপালনের ক্ষেত্রে। আমরা আশা করব আপনারা এখানে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখবেন এই আচরণী পরিপালনে।'
সিইসি আরও বলেন, আমরা আপনাদের মতামত শুনবো। কীভাবে আমরা সবাই মিলে—রাজনৈতিক দল এবং দেশের ভোটার এবং নির্বাচন কমিশন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সবাই মিলে কীভাবে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সে লক্ষ্যে আমরা একসাথে কাজ করব। আমরা আপনাদেরকে সাথে নিয়ে এগোতে চাই। আমরা আপনাদের সাহায্য নিয়ে এগোতে চাই। তবে কীভাবে আমরা এগোতে পারি সেই পরামর্শ আপনাদের কাছ থেকে আমরা চাইবো।'
গণভোট নিয়ে ইসির করণীয় জানতে চেয়েছে এনসিপি
সংলাপে গণভোটে বিষয় ইসিকে সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী। তবে ইসি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
পাটওয়ারী বলেন, 'সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইলেকশন কমিশনের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। কমিশন যদি সংবিধান অনুসারে কাজ করে এবং কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত থাকে, তখন রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা শতভাগ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।'
তিনি বলেন, 'আসন্ন নির্বাচনে এনসিপি পুরোপুরি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।' তিনি নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, 'এই নির্বাচনে বড় একটি বিষয় হলো গণভোট। গণভোট কীভাবে পরিচালিত হবে, এটি কবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং প্রতারণা প্রতিরোধের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেওয়া হয়েছে—এগুলো নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দলটি প্রস্তুতি নেবে এবং প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে।'
পাটওয়ারী বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্রতা অক্ষুণ্ন রাখা জরুরি। যদি কমিশন সকল রাজনৈতিক দল থেকে স্বাধীন থাকে, তাহলে এনসিপি ১০০ শতাংশ সহযোগিতা প্রদান করবে। পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগী দলকেও কোঅপারেশন মোডে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।'
নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তাব দেন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, 'ইলেকশনের সময় নারীরা সাইবার হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে পারেন, তাই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।'
তিনি তরুণ ভোটারদের উৎসাহিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, 'এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গণতান্ত্রিক সম্মান বজায় থাকবে এবং তরুণরা ভুল পথে না গেলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে।'
প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়েও নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'প্রবাসী ভোটারদের জন্য সময় সীমিত, যদি প্রক্রিয়া আগে থেকে চালু করা হয়, তাহলে অংশগ্রহণ বাড়বে। এতে ভোটার সংখ্যা ও নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।'
নির্বাচনের প্রতীক ও প্রার্থীর স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করার গুরুত্বেও তিনি জোর দেন। তিনি বলেন, 'প্রতীক একজন প্রার্থীর পরিচয়, যা ভোটারদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।'
যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে পাটওয়ারী বলেন, 'প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য একজন অফিসার ট্যাগ করলে দলের উদ্বেগ ও কনসার্ন সহজভাবে জানানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি মনিটরিং সেল গঠন করা হলে বিষয়গুলো দ্রুত জানানো যাবে।'
নতুন ভোটারদের (১৮ বছর পূর্ণ হওয়া) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ভোটারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।'
ইসি বিভিন্ন নির্বাচনী বিধি ও আইন পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ সাকির
সংলাপে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে, এর জন্য বুথ ও লোকবল আলাদা রাখার পক্ষে মত আমাদের। একই কেন্দ্রে ভোট হবে, বুথ ও ভোটগ্রহণের কর্মকর্তা আলাদা থাকবে।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন সময়কালসহ নির্বাচন পূর্বকালীন সময়েও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার।'
সাকি আরও বলেন, 'আমাদের মতো নতুন দলগুলোর জন্য বেশি সমস্যা, কারণ কোনো দল যদি মনে করে জোটগতভাবে এটি প্রতীকে নির্বাচন করবে, সেক্ষেত্রে বাধা রাখা ঠিক নয়।'
তিনি বলেন, 'একজন প্রার্থী এক আসনে ২০ টি বিলবোর্ড লাগাতে পারবেন এই বিষয়টি আসলেই কম হয়েছে। বিষয়টি বাড়িয়ে বাস্তবসম্মত করা দরকার।'
বিগত সরকার উৎখাত হওয়ার পর গঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিভিন্ন নির্বাচনী বিধি ও আইন পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'একটি গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন এবং জাতীয় ঐকমত্যের জন্য আলাপ-আলোচনা অপরিহার্য।' জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে নির্বাচনী বিধিমালা ও আইনে পরিবর্তন আনার আগে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন তার যে আইন দেয়, নির্বাচনী বিধি থেকে শুরু করে যত ধরনের পরিবর্তন তারা করছেন, সেইসব বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাপ আলোচনা করা দরকার ছিল। এই আলোচনা করা দরকার ছিল, এই ধরনের বিধি কিংবা যেকোনো ধরনের চেঞ্জেসের আগে।'
সাকি বলেন, 'নির্বাচনসংক্রান্ত কাজ এককভাবে করা সম্ভব নয়। সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের একটা সমন্বিত মতামতটা তৈরি করা দরকার। বিশেষভাবে এই মুহূর্তে, যখন দেশ একটি ডেমোক্র্যাটিক ট্রানজিশনের মধ্যে আছে এবং যেখানে আমাদের ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য খুব জরুরি, তখন এই আলাপ-আলোচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ।'
নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘসূত্রতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তার দল নিবন্ধন পেতে যে প্রতিকূলতার শিকার হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, '২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আমরা আমাদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলাম, সেই নিবন্ধন তারা দেননি পলিটিক্যাল হস্তক্ষেপের কারণে। কোর্টের নির্দেশ কার্যকর হয় না।'
তিনি উল্লেখ করেন, উচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পরেও এবং সেই রায়ের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও, গত ৫ আগস্ট সরকারের উৎখাত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা নিবন্ধন পাননি।
একটি ভালো নির্বাচনের জন্য আইনি কাঠামোর চেয়ে পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেন সাকি। নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও ইসির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি 'নির্বাচন পরিবেশ মনিটরিং কমিটি' গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। এই কমিটি সংঘাতের ঘটনা দ্রুত সমাধান করতে পারবে।
তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো যখন সহযোগিতা করেছে তখনই কেবল এই দেশে ভালো নির্বাচন হয়েছে।' তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে একটি জবাবদিহিমূলক, ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ সংগ্রহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি একটি 'কনস্টিটিউশনাল কমিশনের মাধ্যমে' নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের সাংবিধানিক পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন।
এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে কী নির্বাচন কমিশন আত্মসমর্পণ করেছে?: লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান
ইসির সাথে সংলাপে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, 'এনসিপির নিবন্ধনের সময় শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশন নোটিশ দিয়েও জানিয়েছিল, শাপলা প্রতীক কোনও দলের প্রতীক হতে পারবে না। তারা এটাও বলেছিল যে, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এনসিপি প্রতীক বাছাই না করে তাহলে ইসিই নিজ থেকে তাদের প্রতীক দিবে।,
তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন ঠিকই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, সাথে যুক্ত করেছে কলি। কিন্তু এনসিপি তাদের প্রতীক শাপলাই ব্যবহার করছে। তার মানে কি নির্বাচন কমিশন এনসিপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে? যা নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।'
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, 'এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পোলিং এজেন্ট থাকবে। কিন্তু তারা ভোটের মাঠে, তাদের দিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে?'
ইরান বলেন, 'আমরা সুন্দর সুন্দর আইন করেছি কিন্তু সেটা কি মানছি? এখন ঢাকার কোনও দেয়াল ফাঁকা নেই, বড় বড় দলগুলো পোস্টার লাগিয়ে ফেলেছে অলরেডি। মাত্র নির্বাচনকালীন কয়েক দিনের জন্য কীভাবে এই বিধি মানাবেন? প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত ২৫ লাখ টাকায় চায়ের বিলও হয় না। তাই বাস্তবসম্মত বিধান হওয়া উচিত।'
উল্লেখ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে ১১ এজেন্ডা নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছে নির্বাচন কমিশন।
১১ দফায়―ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংলাপে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার পর আচরণ বিধি কঠোরভাবে মানা, নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে অঙ্গীকারনামা সম্পাদন, বিদেশে ভোট ও দেশের ভিতরে ডাক ভোট বাস্তবায়ন, নির্বাচনি এজেন্ট নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, ভুল তথ্য ও অপতথ্য প্রতিরোধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, লিঙ্গ, বর্ণ ও ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য না করা, ধর্মীয় উপাসনালয় রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য ব্যবহার না করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি ভিডিওর মাধ্যমে প্রতিপক্ষ, লিঙ্গ বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
