আলোকচিত্রী শহিদুলের মামলা বাতিল হাইকোর্টের; আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার বহু মামলা বাতিলের সুযোগ
পূর্বের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) বহুল আলোচিত ৫৭ ধারায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্তাধীন মামলা বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে অধস্তন আদালতে ৫৭ ধারায় হওয়া যেসব মামলা দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন রয়েছে, সেসব মামলা অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই বাতিলের পথ উন্মুক্ত হলো।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বনাম রাষ্ট্র মামলায় ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন মামলাটি বাতিল করে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রোববার (১৬ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
অযৌক্তিকভাবে মামলা দায়েরের পর দীর্ঘদিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত এ রায় দেন।
আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন এবং তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান, মনিরা হক মনি ও প্রিয়া আহসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজা আউয়াল ও আসিফ ইমরান।
রায়ের পর্যবেক্ষণ
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছে, 'মামলা বাতিলে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হলো। পাশাপাশি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারায় দায়ের করা (বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৬১(১) ও (২) ধারা) মামলাটি অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন পর্যায়ে চলমান থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেওয়া হলো।'
রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে শহিদুল আলমের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান গণমাধ্যমকে বলেন, 'এই মামলার এজাহারে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে এবং মামলা দায়েরের দীর্ঘদিন পরেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন থাকা মামলাটি বাতিল করে দিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ আদালতের এমন পর্যবেক্ষণের কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় (বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৬১ ধারায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে) দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন থাকা মামলাসমূহ চলতে পারবে না। এই পর্যবেক্ষণের উদাহরণ প্রয়োগ করে অধস্তন আদালতে ৫৭ ধারায় তদন্তাধীন পর্যায়ে থাকা মামলাসমূহ থেকে আসামিরা খালাস পাওয়ার সুযোগ পাবেন।'
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন ৬ আগস্ট 'উসকানিমূলক মিথ্যা' প্রচারের অভিযোগে রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়।
ওই মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১০৭ দিন কারাভোগের পর একই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মামলার তদন্ত কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ শহিদুল আলম একটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারিসহ তদন্তের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন। তবে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সেই রুল খারিজ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল বিভাগে গেলেও ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়।
পরে মামলার এজাহার ও তদন্ত কার্যক্রম বাতিল চেয়ে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে নতুন করে আবেদন করেন শহিদুল। সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটি বাতিলের রায় দেয়।
শহিদুল আলমের আইনজীবীদের প্রধান যুক্তি ছিল—২০১৮ সালের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) কার্যকর হওয়ায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হয়েছে। নতুন আইন অনুসারে, পুরনো আইনের অধীনে করা যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি, বা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়নি, সেগুলো আর চলতে পারে না।
