সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ২০০ টাকা মুচলেকায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসানের আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন বিকেল সোয়া ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় তাকে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে আদালতের ৯ তলার এজলাসে তোলা হয়।
হিরো আলমের আইনজীবী শান্তা সাছসিনা, রিপনসহ আরও অনেকেই তার জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষ জিয়াউর রহমান ও অভিজিৎ মজুমদার এই জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২০০ টাকা মুচলেকায় আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, গত ১ জুলাই এই মামলায় হিরো আলম জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পরে চারটা তারিখ আদালত উপস্থিত হতে পারেননি। আগের আইনজীবীর সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ না থাকা কারণে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এজন্য তার জামিন বাতিল হয়েছে।
তারা আরও বলেন, এ পর্যন্ত হিরো আলম কাউকে মারধর করেছে কেউ বলতে পারবেন? না, আজ পর্যন্ত কাউকে তিনি আঘাত করেননি। বরং অন্যের মার খেতে খেতে আজ তিনি হিরো আলম হয়েছেন। এ মামলায় তার ভুল হয়েছে, তিনি ঠিকমতো আদালত হাজির হতে পারেননি। যেকোনো শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করছি।
এরপর বাদীপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, আদালত থেকে জামিন পেয়ে চারটা তারিখ আসামি হাজির হননি। আদালত অবমাননা করেছেন আসামি। আগে বাদীর সাথে আপসের শর্তে জামিন পেলেও তিনি আপস করেননি। আসামি বাদীকে ডিভোর্স দিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। তাকে আপমান করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছেন। জামিন পেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় বিচারক বাদী রিয়া মনিকে জিজ্ঞেসা করেন, আপনার কোনো বক্তব্য আছে?
তখন রিয়া মনি বলেন, আমার জিম্মায় আপসের শর্তে আসামি জামিন দেওয়া হয়েছিল। আমার সাথে কোনো আপস-মীমাংসা হয়নি। বিভিন্ন মিডিয়া ডেকে তালাক দিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে আমাকে আপমান করেছে সে। আমার তো সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। আমাকে প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিং করছে। হিরো আলম আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে। আজও দিয়েছে।
এরপর বিচারক হিরো আলমকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি তাকে ভয়ভীতি দেখান। তখন হিরো আলম বলেন, না স্যার।
বিচারক আবার বলেন, 'আর কখনো তাকে ভয়ভীতি দেখাবেন?' জবাবে হিরো আলম, 'না স্যার। আর একটাও শব্দ করব না।'
পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। ৩০ মিনিট পরে আবারও বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর বিচারক হিরো আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আর কখনো তাকে ভয়ভীতি দেখাবেন? কোনো ম্যাসেজ দেবেন, বা সাইবার বুলিং করবেন?
তখন হিরো আলম বলেন, 'না স্যার।'
এরপর বিচারক ২০০ টাকার মুচলেকায় মামলার আগামী ধার্য দিন পর্যন্ত হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর তিনি কারামুক্ত হন।
রিয়া মনি সাংবাদিকদের বলেন, 'হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।'
এর আগে আজ রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১২ নভেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তার সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসা করার জন্য হাতিরঝিল থানা এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। এ সময় হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারধর করেন। ওই হামলায় বাদীর শরীরে জখম সৃষ্টি হয়। এ সময় তার গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের সোনার চেইন চুরি হয়।
