আগামী নির্বাচনে জনগণ ধানের শীষের ব্যাচ পরে শাপলা কলিতে ভোট দেবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
আগামী নির্বাচনে জনগণ ধানের শীষের ব্যাচ পরে শাপলা কলিতে ভোট দেবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, ''জোর করে মানুষকে ধানের শীষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, তবে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচনে জনগণ ধানের শীষের ব্যাচ পরে শাপলা কলিতে ভোট দেবে।''
রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পথরেখা'-শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ''অনেকেই তো এখন চেয়ারে বসে বলছেন 'আমি নমিনেশন পেপার কিনব' বা 'কয়েকদিন পরে ইলেকশন করব।' আপনাদের আসাদ ভাই আমার খুব পরিচিত ও অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তাকে আমি সত্যিই অনেক শ্রদ্ধা করি। কিন্তু নৈতিক জায়গা থেকে প্রশ্ন আসে, আপনি চেয়ারে বসে এই ধরনের কথা বলতে পারেন কি না?''
তিনি বলেন, ''এটা আসলে আপনাদেরই সমাধান করার বিষয়। আমরা যদি কিছু বলি, তাহলে বলা হয় 'ছোট মুখে বড় কথা'—এছাড়া নানা ব্যঙ্গাত্মক শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিষয়টা আসলে ইথিক্যাল পয়েন্ট থেকে বিবেচনা করা জরুরি।''
এই এনসিপি নেতা বলেন, ''চেয়ারে বসে যদি কেউ বলেন 'আমি নমিনেশন পেপার কিনব,' তাহলে প্রশ্ন আসে এই যে ১৩তম সংশোধনী নিয়ে কার্যক্রম চলছে, অসংখ্য মামলা চলছে, সারাদেশে পিপি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে—এসব কীভাবে হলো?''
তিনি আরও বলেন, ''এগুলো কি নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে হচ্ছে? আমাদের কাছে এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আমরা মনে করি এই সুপ্রিম কোর্টের অঙ্গণে এক ধরনের ফ্যাসিজমের আতুরঘর তৈরি করা হচ্ছে। এই অঙ্গণকে পবিত্র রাখা আপনাদের [আইনজীবীদের] দায়িত্ব।''
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ''আমরা রাজনৈতিক অঙ্গণে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব। কিন্তু আপনাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা এই অঙ্গণকে নিরপেক্ষ ও সম্মানজনক রাখেন।''
এই এনসিপি নেতা বলেন, "বাংলাদেশ সরকারকে আমি আহ্বান জানাব, গত ১৫ বছরে যেসব ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের জীবনের শেষ সম্বল; এমনকি পেনশনের টাকাটাও শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের কথা একবার ভাবুন। অনেকে শেয়ার মার্কেটে সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, কেউ সন্তানের সামনে দুধের টাকার অভাবে ঘরে ফিরতে পারেননি। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন।''
তিনি বলেন, ''এই গণঅভ্যুত্থানের পর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তার উচিত ছিল সেই টাকাগুলো উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে সংরক্ষণ করা, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো যায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সেই উদ্যোগটা এই সরকারের কাছ থেকে দেখতে পাইনি।''
তিনি আরও বলেন, ''বর্তমান অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, আমরা তাদের প্রতি আস্থা রেখেই এই সরকারে বসিয়েছিলাম। কিন্তু ফলাফল হিসেবে তারা আমাদের হাতে শুধু একটি 'লাড্ডু' তুলে দিয়েছেন।"
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "আমাদের আন্দোলনের অন্যতম একজন ছিলেন আসিফ নজরুল স্যার। প্রশ্ন করা হয়, উনি আইন অঙ্গণে কী উপহার রেখে গেলেন? শুনেছি একটা বড় 'সংস্কার' ঘটেছে, তা হলো 'অ্যাসিস্টিং জাজ' নামটা পরিবর্তন। এটাই কি হবে উনার 'সংস্কার'? এই মাত্রাতেই কি শেষ হলো?''
তিনি বলেন, ''এ ধরনের সামান্য পরিবর্তনের জন্য তো দুই হাজার মানুষ জীবন দেননি। কীভাবে আমরা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলব, কীভাবে একটি বাস্তবিক বন্দোবস্ত নিয়ে আসা যায়; যা দেশকে ন্যায্য ও স্বচ্ছ করবে, আমাদেরকে সেটা নতুন করে ভাবতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, ''যদি এ ধরনের মূলগত ও টেকসই বন্দোবস্ত তৈরি না করা যায়, তাহলে যারা আজ উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন, তাদের আমরা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বাধ্য হব।"
এনসিপির এই নেতা বলেন, ''এটা আমাদের জন্য লজ্জা, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েও এখনও আপনি দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। আপনি যদি ভয়ই পান, কাকে ভয় পাচ্ছেন? আমরা তো ভারতকে ভয় পাই না। আমরা কি দেশে চলাফেরা করি না? আমাদের ৫ তারিখের পর ৮ তারিখ পর্যন্ত গুলি করার জন্য ঘুরেছে। অসংখ্য স্নাইপারের মধ্য দিয়েই তো আমরা জীবন অতিক্রম করেছি।''
তিনি বলেন, ''ইদানিং সবগুলো বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছেন তারা। আপনার যদি বুলেটপ্রুফ গাড়ি হয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য তো ট্রেন থেকে পাবলিক সার্ভিস সবগুলোকে আপনার বুলেটপ্রুফ করতে হবে।''
নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ''জামায়াতের ইসলাম নাকি মওদুদী ইসলাম এবং বিএনপির ইসলাম মদিনার ইসলাম।''
তিনি বলেন, ''সালাউদ্দিন সাহেব মদিনার ইসলামে আপনি চাঁদাবাজি, দুর্নীতি কোথায় পাইলেন? মদিনার ইসলামে আপনি ফ্যাসিজাম কোথায় পাইলেন? মদিনার ইসলামে আপনি হাওয়া ভবন কোথায় থেকে পাইলেন? মদিনার ইসলাম তো একটি শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে শিখিয়েছিল আমাদের।''
তিনি বলেন, ''আপনারা যদি মদিনার ইসলাম বাংলাদেশে কায়েম করতে চান, তাহলে মদিনার সনদটা একটু ভালো করে পড়ে নিবেন। তাহলে জুলাই সনদের রেফারেন্সের কিছু না কিছু পাবেন সেখানে। কারণ জুলাই সনদে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, নতুন একটি শান্তি ও সাম্যের সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোই তো মদিনার সনদের ভাষ্যের কথা।''
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ন্যাশনাল ল'ইয়ার্স অ্যালায়েন্সের (এনএলএ)- যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুস সাকিব, যুগ্ম সদস্য সচিব ও আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা, ন্যাশনাল ল'ইয়ার্স অ্যালায়ন্সের মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট সাকিল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক যোবায়ের আল মাহমুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন লিপু।
