সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতা খুন: পুলিশের মামলা, ছেলের রিমান্ড আবেদন
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক হত্যার ঘটনায় তার ছেলে আসাদ আহমদকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শনিবার বিকেলে ছেলে আসাদ আহমদকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে শনিবার রিমান্ডের শুনানি হয়নি।
এসব তথ্য জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। পরে দক্ষিণ সুরমা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ারুল কামাল বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে ছেলেসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম 'সন্দেহজনক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাইফুল বলেন, হত্যা মামলায় নিহত ব্যক্তির ছেলেকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নিজ বাসা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
আব্দুর রাজ্জাক দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের তেলিরাই গ্রামের প্রয়াত মৌলুল হোসেনের ছেলে।
এডিসি সাইফুল জানান, শুক্রবারই সন্দেহবশত নিহতের ছেলে আসাদকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে।
এরআগে শুক্রবার পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছিলো, ফজরের নামাজ পড়ে বাসার ছাদে হাঁটতে যান আবদুর রাজ্জাক। সকাল ৯টার দিকে তাকে বাসায় না পেয়ে ছাদে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা তার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়।
তবে স্বজনরা জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজে কাউকে বাড়িতে প্রবেশ বা বের হতে দেখা যায়নি। এছাড়া প্রধান ফটক ছিলো তালাবদ্ধ। পাশাপাশি পারিবারিক ভাবেও ছিলো না কোনো সমস্যা। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই তার মানসিক অবস্থা খারাপ হয়। এনিয়ে তিনি ভারতেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন। গত কয়েক মাসে তার মানসিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছিলো।
কিন্তু এই বক্তব্য মানতে নারাজ পুলিশ।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের বলেন, আব্দুর রাজ্জাক আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রথমে দাবি করেছিলো পরিবার। তবে আমাদের ধারণা তাকে খুন করা হয়েছে। আত্মহত্যা করলে নাড়িভুঁড়ি বের হবে কেন। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্নও রয়েছে।
এরপর পুলিশ পারিবারিক বিরোধসহ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের বিষয় সামনে রেখে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ছুরিটি ফরেনসিকের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আবদুর রাজ্জাকের পেট, বুক, পুরুষাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাতের গভীর চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশের পাশ থেকে একটি ২২ ইঞ্চি লম্বা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে লাশ উদ্ধারের আগপর্যন্ত নিহত ব্যক্তির বাড়িতে কাউকে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে শুধু ওই বাড়ির গৃহকর্মী সকাল আটটার দিকে বাড়িতে ঢোকেন। তিনি বাড়িতে যাওয়ার পর আবদুর রাজ্জাককে তার কক্ষে পাননি। একপর্যায়ে সিঁড়ির ঘরে লাশটি দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় সিঁড়ির দরজা তালাবদ্ধ ছিল, সিঁড়ির চাবি আবদুর রাজ্জাকের কাছেই ছিল।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত আবদুর রাজ্জাকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। সন্তানদের মধ্যে প্রায় মাস দুয়েক আগে সম্পত্তি ভাগ–ভাটোয়ারাও করে দিয়েছিলেন তিনি। শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য ভারতেও গিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে একটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পারিবারিক সূত্র। মামলা থাকলেও তিনি নিজ বাড়িতেই অবস্থান করতেন।
