এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের হুবুহু প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেছেন, 'জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কমিশনের দেওয়া সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে তার হুবহু প্রতিফলন নেই। রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ।'
আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত 'ফ্রম রুল বাই পাওয়ার টু রুল অব ল: ট্রানজিশন টু অ্যা ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে সুপারিশ দেওয়া করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা কিছু সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এত দিন তারা মনে করতেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তারা যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে একজন দস্তখতকারী প্রধান উপদেষ্টাও আছেন, যিনি কমিশনের সভাপতি। ফলে এটি সরকারের পক্ষ থেকেও একধরনের অনুমোদন বা সমর্থন।'
সুপারিশে কিছু দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছেন বলে মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, 'রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। আমি বিপক্ষেই খেলছিলাম মনে হয়। সেই হিসেবে জাতির পক্ষের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো যখন চার্টারের বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছিল, তখন বিএনপি এটি নিশ্চিত করতে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও বেশিরভাগ দল এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল, পরে কমিশন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায় বলে দাবি করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমি প্রায়ই একাকী মনে করতাম, যেন আমি একাই বিরোধী দলে। মনে হতো কমিশন এবং কয়েকটি দল তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।'
সালাহউদ্দিন আরও দাবি করেছেন, বর্তমানে যে বিষয়ে গণভোটের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেগুলো কমিশনের স্তরে কখনও আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব প্রথম আমি দিয়েছি, এবং তখন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আমার সঙ্গে একমত হয়েছিল। কিন্তু এখন গণভোটের জন্য নির্ধারিত ৪৮টি সাংবিধানিক বিষয়ের কোনো আলোচনা কমিশনের সঙ্গে হয়নি।'
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা এখন এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা জাতিকে বিভক্ত করবে, অনৈক্য সৃষ্টি করবে। এর ভিত্তিতে কোনো ঐকমত্য হবে না। তারা কী অর্জন করতে চায়, আমরা জানি না।'
তিনি নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করে বলেন, জোটের সদস্যদের নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করতে বাধ্য করা 'অগণতান্ত্রিক' সিদ্ধান্ত।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় নিরপেক্ষভাবে আচরণ করুক। যাতে জাতি আশ্বস্ত হতে পারে এবং ঐক্য বজায় থাকে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে।'
