তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে অস্পষ্টতা দূর করার দাবি এনসিপির
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালসংক্রান্ত রায়ের পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট 'অস্পষ্টতা' দূর করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি পুরোনো ত্রয়োদশ সংশোধনীর আদলে হবে, নাকি জুলাই সনদে বর্ণিত নতুন প্রক্রিয়ায় হবে; সরকারকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানান তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, 'জুলাই সনদের আদেশে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কিন্তু সরকার এখনো এই আদেশের অস্পষ্ট অংশগুলো ব্যাখ্যা করেনি। বিশেষ করে আজকের রায়ের পর প্রশ্ন উঠেছে—দেশ কি পুরোনো সংশোধনীর মতে চলবে, নাকি জুলাই সনদে বর্ণিত নতুন প্রক্রিয়ায়? সরকার বলছে জুলাই সনদ অনুযায়ী হবে, কিন্তু বিভিন্ন দল এখনো পুরোনো সংশোধনীর কথা তুলছে।'
সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে হবে। কিন্তু বিভিন্ন দল, বিশেষ করে বিএনপি ত্রয়োদশ সংশোধনীতেই ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। অথচ সেখানে [ত্রয়োদশ সংশোধনী] যেভাবে এটা আছে, সেটা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নানা ধরনের সংকট তৈরি করেছে, এক–এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।'
বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জুলাই সনদে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে নাগরিক পার্টির এই নেতা বলেন, 'জুলাই সনদে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে গঠন করাই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি। এর ব্যত্যয় করার কোনো সুযোগ নেই।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অতীতে বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরশীল করার ফলে সৃষ্ট সংকটের উদাহরণ টেনে আখতার হোসেন বলেন, 'এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নানা ধরনের সংকট ঘনীভূত হয়েছিল। ২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এল, নিজেদের মতো করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তৈরি করার জন্য তারা বিচারপতিদের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছিল। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটেছিল।'
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ ব্যাখ্যা করে আখতার হোসেন বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং এর আইনি ভিত্তিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষর থেকে বিরত রয়েছি। কেননা, জুলাই সনদের আদেশের মধ্যে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায়টা আসার পর প্রশ্ন আবারও উঠেছে যে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো করে হবে, নাকি জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে হবে। এই অস্পষ্টতাও সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, বিএনপি ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যেতে চাইছে। সে জায়গায় জুলাই সনদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করাই এ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। জুলাই সনদের অস্পষ্টতা দূর করা এবং সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হলে আমরা সনদে স্বাক্ষর করব।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
