ডিজিটাল ব্যাংকে শেয়ারধারণের নিয়মে শিথিলতা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের
ডিজিটাল ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করতে সরকারের সম্মতি চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সম্মতি মিললে ডিজিটাল ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা একক বা যৌথভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে ও ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখতে পারবেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি-নির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যকর প্রতিষ্ঠা ও টেকসই পরিচালনার জন্য বিপুল প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ, ডেটা সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং ধারাবাহিক উদ্ভাবন অপরিহার্য।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের শুধু আর্থিক মূলধন নয়, তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই কার্যকর পরিচালনা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কৌশলগত দেশি–বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মো. বায়েজীদ সরকারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, 'ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ প্রণোদনা বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তফসিলি ব্যাংকের তুলনায় তাদের জন্য শেয়ার ধারণের উচ্চতর সীমা নির্ধারণ করা দরকার।'
বর্তমান ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক বা যৌথভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারেন না এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করা যায় না।
তবে আইনের একটি ধারায় বলা আছে, সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে কোনো ব্যাংক কোম্পানির জন্য এই সীমা শিথিল করতে পারে। সেই বিধান অনুযায়ীই ডিজিটাল ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সীমা শিথিলের জন্য সরকারের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠি আজই আমরা পেয়েছি। খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
তিনি আরও বলেন, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় 'নগদ ডিজিটাল ব্যাংক'-এর লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও শেয়ার কেনা ও ধারণের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা হয়েছিল। এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব অনুযায়ী উচ্চতর সীমা শিথিলের বিষয়ে সরকারের সম্মতি দেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৪ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে 'নগদ ডিজিটাল ব্যাংক' চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। তবে ওই বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সটি স্থগিত করে।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ইস্যুকৃত মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানির মালিকানা বিদ্যমান ১০ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি (Osiris Capital Partners LLC) সবচেয়ে বড় অংশীদার, যাদের মালিকানা ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৪৯.৮০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর প্রতিষ্ঠান ব্লু হাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি (Blue Haven Ventures LLC) ধারণ করছে ২৪.৯০ শতাংশ, এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেড (Finclusion Ventures Pte Ltd)-এর মালিকানা ১১ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "শেয়ারধারণের সীমা শিথিলের পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা যেন যথাযথভাবে কার্যকর থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংককে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শেয়ার নিয়ে ব্যাংকটির ওপর আধিপত্য বিস্তার বা অপব্যবহার করতে না পারে।"
তিনি আরও বলেন, "উচ্চতর সীমা শিথিল করা হলেও, কতটুকু পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে—তার একটি সর্বোচ্চ সীমা অবশ্যই নির্ধারণ থাকতে হবে।"
ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে ২ নভেম্বর
চলতি বছরের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করে। প্রাথমিকভাবে আবেদন জমার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময় সংশোধিত নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, কোনো শেল কোম্পানি যেন প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের স্পনসর হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরে ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক সময়সীমা বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, দেশের মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক ও আকিজ রিসোর্সেসসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
