চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে এবং চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত 'এনআরবি গ্লোবাল কনভেনশন ঢাকা-২০২৫' অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'রেমিট্যান্স আমাদের দেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টকে স্থিতিশীল করেছে। এর ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স নেতিবাচক অবস্থান থেকে ইতিবাচক অবস্থানে ফিরে এসেছে। এমনকি অর্থনৈতিক সংকটের কঠিন সময়েও রেমিট্যান্স দেশকে বড় ধরণের সহায়তা করেছে।'
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশি নন-রেসিডেন্ট (এনআরবি) সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ আরও দৃঢ় করা এবং দেশের জন্য কাজ করতে তাদের আগ্রহী করে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
এ প্রসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, তিনি নিজে ৩২ বছর যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৪ বছর কানাডায় বসবাস করেছেন। সেই হিসেবে নিজেকে একজন 'আধা-এনআরবি' হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
গভর্নর বলেন, 'বাংলাদেশের মতো দেশে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় কর্মরত শ্রমিকদের ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো জরুরি।'
দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকার পর দেশে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভর্নর বলেন, 'সম্পূর্ণভাবে দেশে ফিরে আসা একটি আবেগপূর্ণ ও জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে সশরীরে না ফিরেও আংশিকভাবে দেশ ও বিদেশে অবস্থান করে দেশের জন্য কাজ করা সম্ভব। অনেক প্রবাসী চিকিৎসক তাদের সঞ্চয় দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, যা প্রশংসনীয়।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রবাসীদের একটি বড় অংশ "বেবি বুমার" প্রজন্মের, যারা বিদেশে সফল হয়েছেন এবং এখন দেশের জন্য কিছু করতে চান। বিশ্বজুড়ে প্রবাসীদের হাতে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার সামান্য অংশও যদি দেশে বিনিয়োগ হিসেবে আসে, তবে তা শত শত বিলিয়ন ডলারের সমান হতে পারে।'
তিনি আশা করেন, এনআরবি প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে দেশের সেবায় যুক্ত থাকবেন।
প্রবাসীদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও এনআরবি ব্যাংক, সিআইপি সুবিধা এবং বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনিয়োগের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে এবং প্রবাসীরা এখন বিদেশ থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন।'
সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় এনআরবিদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গভর্নর সফল প্রবাসীদের প্রতি দেশের বেকারত্ব নিরসন, শিক্ষা ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
নিজের জীবন থেকে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, '২০০৮ সালে আইএমএফ-এর উচ্চপদস্থ চাকরি ছেড়ে যখন দেশে ফিরি, তখন অনেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দেশ আমাকে কী দেবে? আমি বলেছিলাম, কিছুই না। আসলে দেশে ফেরার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেওয়া, নেওয়া নয়। প্রত্যাশা নিয়ে এলে কেবল হতাশাই বাড়বে, কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারলেই প্রকৃত তৃপ্তি পাওয়া যায়।'
সবশেষে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, 'প্রবাসীদের সবসময় সশরীরে দেশে থাকতে হবে এমন নয়। তারা চাইলে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ), শেয়ারবাজার কিংবা সরকারি ডলার বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন, যা থেকে আকর্ষণীয় মুনাফা পাওয়া সম্ভব।'
