জাতীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি দরকার: তথ্য উপদেষ্টা
জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে একটি জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে 'অগ্নিঝরা বর্ষা: দেশ ও বিদেশে' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে 'ব্রেইন' নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
মাহফুজ আলম বলেন, 'বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে একটি জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি দরকার। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে কোনো জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি দেখতে পাবেন না।'
তিনি বলেন, '৯০-এর দশকে দেশে বুর্জোয়াদের উত্থান ঘটে। এরশাদকে অনেক গালি দেওয়ার সুযোগ আছে, আমরা গালি দেব; কিন্তু তারপরেও এবং শহীদ জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে মোটামুটি ৯৬ পর্যন্ত সময়টাতে আমাদের এই বুর্জোয়া শ্রেণি, যাদের হাতে এখন অনেক টাকা, যাদের রয়েছে অনেক গ্রুপ অব কোম্পানি—তারা বেড়ে উঠেছে।'
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'এই বুর্জোয়ারা রাষ্ট্রের প্রণোদনা ও জনগণের টাকায় গড়ে উঠেছে। কিন্তু তারা আমাদের দেশকে কী দিয়েছে; সেই প্রশ্নটা রাখা প্রয়োজন।'
তিনি আরও বলেন, 'কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট, সামরিক-সিভিল ব্যুরোক্রেসি ও করপোরেশন; এই তিনের মিলিত প্রভাবে এক ধরনের "আনহোলি নেক্সাস" বা অবৈধ আতাত গড়ে উঠেছে। এই নেক্সাসের কাছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা খুবই গৌণ হয়ে যায়। ক্ষমতার এই তিন নেক্সাসের বন্ধন যদি না ভাঙে, তাহলে ভালো নীতি প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।'
মাহফুজ আলম বলেন, 'গত এক বছরে আমরা কিছু করার চেষ্টা করেছি, হয়তো পুরোপুরি পারিনি। কিন্তু প্রশ্ন হলো—রাজনৈতিক নেতার কথাই কি গুরুত্বপূর্ণ হবে, নাকি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সেই পাওয়ার স্টেকহোল্ডাররা, যারা নিজেদের স্বার্থের বাইরে কিছু দেখতে পারেন না? মিডিয়া কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট, সামরিক ও সিভিল ব্যুরোক্রেসি এবং করপোরেট গ্রুপ—এই তিন জায়গায় জনগণের জন্য কিছু করার তাগিদ আমি দেখি না।'
তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'সিভিল-মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি কি পাকিস্তানি বা ঔপনিবেশিক আমলের ব্যুরোক্রেসি থেকে বের হতে পেরেছে? যদি না পারে, তাহলে আমরা যত সুন্দর আলোচনা করি বা নীতি প্রস্তাব দিই, তা কার্যকর হবে না। ক্ষমতার এই তিন নেক্সাসের বন্ধন না ভাঙলে যত ভালো নীতিই আনা হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।'
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০১৪ সালের পর দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, 'তাদের ফিরে আসা বা না আসা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আওয়ামী লীগ যে সিস্টেম চালাত, স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে অর্থ পৌঁছাত; সেই সিস্টেম না থাকলে দলটি আর ফিরে আসতে পারবে না।'
বর্তমান সরকার কোনো সংকটে নেই উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'উদ্যোক্তারা নতুন সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হবে। এখন ট্রাস্টের সংকট আছে। সবাই নির্বাচনের পর বিনিয়োগে নামবে। এটা সরকারের কোনো বড় সংকট নয়; বরং বাজারে আস্থার অভাব। সবাই টাকা ধরে রাখতে চায়—নির্বাচনের পর ৫ বছরের সরকার এলে তখনই তারা আবার ব্যবসায় অর্থ প্রবাহিত করবে।'
