ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড পুনঃস্থাপন, উত্তরা-মতিঝিল পুরো লাইনে চালু হলো মেট্রোরেল
রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের ৪৩৩ নম্বর পিয়ার থেকে খুলে পড়ে যাওয়া বিয়ারিং প্যাড পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। মেরামত শেষে এখন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথে ট্রেন চলছে। ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন শেষে আজ (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আবার মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
গতকাল ফার্মগেটের যেখানে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে, সেখানে তা আজ সকালে নতুন করে লাগানো হয়। এরপর বন্ধ অংশে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়।
পরীক্ষামূলক চলাচলে সময় ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, 'বিচ্যুত হওয়া বিয়ারিং প্যাড পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। এখন ট্রায়াল চলছে। খুব দ্রুতই ফার্মগেট স্টেশন চালু হবে। ট্রায়াল শেষ হলেই মেট্রো চলাচল শুরু হবে।'
এর আগে গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি পিয়ারের বিয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোস্টেশন-সংলগ্ন বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার পর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বিকেল ৩টায় শুধু দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো চলাচল আবার আংশিক চালু হয়। আর সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মতিঝিল হতে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা চালু করা হয়।
এর আগেও ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একই ধরনের ঘটনায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো চলাচল ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্ভাব্য নকশাগত ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা জানান, মেট্রোরেল লাইনের বাঁকে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে এবং সেখানেই প্যাডটি খসে পড়েছে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, 'যেখানে ট্রেন বাঁক নেয়, সেখানে চাপ বেশি থাকে। কিন্তু নকশাতেই হয়তো এই অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।'
'বিয়ারিং ধরে রাখার জন্য রাবারের প্যাডটি ভালোভাবে আটকানো ছিল না। ফলে এটি অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে পারেনি', যোগ করেন তিনি।
ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি আরও চাপ সহনশীল ও উন্নত প্রযুক্তির 'পড বেয়ারিং' ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
বিয়ারিং প্যাডের কাজ কী?
বিয়ারিং প্যাডগুলো পথের বাঁকানো অংশে বসানো থাকে, যেখানে ট্রেন যাওয়ার সময় কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। এই প্যাডগুলো কেবল ট্রেনের ওজনই বহন করে না, বরং ট্রেন চলার সময় সৃষ্ট কম্পনও শোষণ করে।
যখন কোনো বাঁকে বিয়ারিং প্যাড নষ্ট হয়ে যায়, তখন পিলারের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে কাঠামোগত ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়, এমনকি ধসের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। এই প্যাডগুলো মূলত ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট কম্পন ও ঝাঁকুনি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতিতেও কাঠামোকে সুরক্ষা দেয়। ফলে এগুলো ঠিকভাবে কাজ না করলে ট্রেনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিচের সড়কে থাকা মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বিয়ারিং প্যাডের কাজ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'যখন ট্রেন চলে যায়, তখন এটি কিছুটা সংকুচিত হয় এবং ট্রেন চলে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। যদি প্যাডটি তার কার্যকারিতা হারায় বা পড়ে যায়, তাহলে কাঠামোর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়।'
