কীটনাশকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেবে সরকার
বালাইনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণ এবং শুল্ক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সংগঠনটির কাছে পাঠানো এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ও আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল কীটনাশক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ)। সংগঠনটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলামের সই করা চিঠি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে 'স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন' শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএএমএ সভাপতিসহ ১১টা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এতে সভাপতিত্ব করেন।
বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ে ওই সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-
- ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন প্রদান, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রণালয় তার অধস্তন দপ্তরের মাধ্যমে অনুরূপ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে। এতে ওষুধের মতো স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে ও আমদানির বিকল্প শিল্প তৈরি হবে এবং রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হবে।
- এসব উপকরণ/কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানি সহজীকরণ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে শুল্ক সুবিধা ইত্যাদির জন্য পাঠানো হবে।
বিএএমএ সূত্রে জানা যায়, কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার মাত্র ৫ শতাংশ। এর বিপরীতে কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। এ কারণে চাহিদার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন- পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানি অবাধ ও সহজ করা হয়, তাহলে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যাবে। স্থানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি), অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) ও স্কয়ারসহ মোট ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে আছে।
এর ফলে আমদানির ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে এখন থেকে বাংলাদেশেই উৎপাদন হবে সব ধরনের বালাইনাশক এবং এতে ওষুধ শিল্পের মতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজার সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। এর ৫৫ শতাংশ বা ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বাজার রয়েছে ৭টি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। আর স্থানীয় আমদানিকারকেরা চাহিদার প্রায় ৪১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে। কীটনাশকের বাজারে দেশি উৎপাদনকারীদের হিস্যা মাত্র ৪ শতাংশ বা ৩০০ কোটি টাকার।
জানতে চাইলে বিএএমএ সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কারণ, আমরা যারা স্থানীয় উৎপাদক, তারা উচ্চ শুল্কের কারণে টিকতে পারছিলাম না। বর্তমানে নিবন্ধিত ২২টি কোম্পানি থাকলেও অনেকে ফ্যাক্টরি চালাতে পারছিল না। কারণ, কীটনাশক আমদানিতে শুল্ক কম। কিন্তু কাঁচামাল আনতে গেলে শুল্ক অনেক বেশি।'
'এখন এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আর কোনো বালাইনাশক আমদানি করতে হবে না। ওষুধ শিল্পের ন্যায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে', যোগ করেন তিনি।
