মিটফোর্ডের আদলে নারায়ণগঞ্জে নৈশপ্রহরীকে ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা

নারায়ণগঞ্জে আবু হানিফ (৩০) নামে এক নৈশপ্রহরীকে নৃশংসভাবে ইট দিয়ে থেঁতলে ও পিটিয়ে হত্যা করার একটি ভয়াবহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে ৫-৭ জন হামলাকারীকে উপর্যুপরি ইট দিয়ে থেঁতলে তাকে হত্যা করার দৃশ্য দেখা গেছে। এই ঘটনা ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সাম্প্রতিক ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার সাথে মিলে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে হানিফকে নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খানপুর জোড়া ট্যাংকি মাঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। একটি শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে দফায় দফায় মারধর করা হয় তাকে।
নির্মম মারধরের পর হানিফকে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৯টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ভীতি ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশ এখন পর্যন্ত তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন—কুমিল্লার মুরাদনগরের সায়েস্তারা গ্রামের বাহার (৩৬) ও তার ভাই সাইদুল ইসলাম (২৫) এবং নারায়ণগঞ্জের মেট্রোহল এলাকার শফিকুল রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান জিতু (২৯)।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির বলেন, 'আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত অন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।'
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত আবু হানিফ স্থানীয় একটি বাড়ির নৈশ প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি তিনি বাগেরহাটের শরণখোলার আবুল কালামের ছেলে। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
হানিফের ছোট বোন রাবেয়া বলেন, 'দুপুর ১২টার দিকে এলাকার কিছু ছেলে বাসায় এসেই আমার ভাইরে মারতে মারতে নিয়ে চলে যায়। আমাদের কোনো বাধা শোনেনি, কী কারণে মারতেছে তা-ও বলেনি। অনেক পরে বলতেছে সে (হানিফ) নাকি কোন বাচ্চারে ধর্ষণ করতে চাইছে। কিন্তু কোন মেয়ে, কবে, তার কিছুই আমরা জানি না।'
হানিফের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি কাজ থেকে দ্রুত বাসায় ছুটে আসেন। তিনি বলেন, 'আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, এলাকার কিছু ছেলে বাসায় ঝামেলা করতেছে। ফোন পাইয়া আমি বাড়িতে আসি। বাসায় আসার পর ওই ছেলেরা আমাকে ধইরা খানপুর জোড়া টাংকির মাঠে নিয়া যায়। তখন দেখি, হানিফ ভাইরে ভিতরে বসায়া রাখছে। ১০-১২ জন যুবক পোলাপান ছিল। তাদের মধ্যে পাশের বাড়ির অভি নামে স্থানীয় একজনরে চিনছি। পরে হানিফ ভাইরে অটোতে তুইলা নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। অনেক পরে আমরা তারে হাসপাতালে পাই।'