ঢাকা বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: ওষুধ আমদানিকারকদের রপ্তানি করা কাঁচামাল সরাসরি হস্তান্তর করা হবে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত গুদামঘরসহ পুরো এলাকা পুড়ে যাওয়ার পর, এখন থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানিকারকরা তাদের চালান পৌঁছানোর পর সরাসরি সেটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সঙ্গে বৈঠক শেষে ওষুধ শিল্পের প্রতিনিধিরা জানান,যতদিন না হিমায়িত সংরক্ষণ ব্যবস্থাটি পুনরায় নির্মাণ না করা হয়, ততদিন নতুন এই অস্থায়ী ব্যবস্থা বহাল থাকবে এবং এতে প্রায় তিনমাস সময় লাগতে পারে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব ওষুধের কাঁচামাল ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ প্রয়োজন, আগেভাগেই সেগুলোর কাগজপত্র প্রস্তুত রাখলে ও দাম পরিশোধ করলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব আমাদের হাতে পৌঁছে দেবে—সম্ভব হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কারখানা ও গুদামগুলোতে যেহেতু হিমায়িত সংরক্ষণাগার নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে, তাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন সংরক্ষণাগার তৈরিতে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে।'
বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, 'কাস্টমস, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের জানানো হয়েছে, কাস্টমস ও পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম প্রতিদিনই চালু থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া শুক্রবার ও শনিবারও ব্যাংকগুলো কাস্টমস-সংক্রান্ত নথি গ্রহণ করবে।'
আগুনে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ কার্গো পরিচালনা ও শীতলীকরণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে সংবেদনশীল ওষুধের কাঁচামাল আমদানি ও সংরক্ষণ ব্যাহত হয়েছে। এতে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকদের মধ্যে কাঁচামাল সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ওষুধ শিল্পে ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে দেশের ওষুধ শিল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
ডা. জাকির হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য কোম্পানির হিসাব শেষ হলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে ছিল অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন এবং ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডে বেশ কিছু যন্ত্রাংশ ও মেশিনারিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই যন্ত্রাংশগুলো পুনরায় আমদানি ও স্থাপন করতে সময় লাগবে, ফলে স্বাভাবিক উৎপাদন চালু হতেও বিলম্ব হতে পারে।
বাপি জানায়, প্রতিটি কাঁচামাল একাধিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে প্রাথমিক ক্ষতির হিসাব আরও বাড়তে পারে। ফলে কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওষুধ শিল্পে সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায়।
ডা. জাকির হোসেন আশ্বস্ত করে বলেন, এই সংকট সত্ত্বেও কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধের দাম বাড়াবে না বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে না।
রেনাটা পিএলসির প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার কবির কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি একে 'বড় ধরনের সরকারি ব্যর্থতা' বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের পণ্য কাস্টমস গুদামে সরকারি তত্ত্বাবধানে ছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি কীভাবে সম্ভব? দীর্ঘমেয়াদি ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এখনই গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আর ছোট নেই।'