কার্গো ভিলেজ অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা, ছয় দফা দাবি ইএবির

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল ক্ষতির পর সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ইএবি ও বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি জানান, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ক্ষতির নিরূপণ শেষে দ্রুত ছয় দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো:
১. ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে করা বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া,
২. যেসব পণ্যের বীমা করা ছিল না, সেসব ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান,
৩. ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ,
৪. ঔষধ শিল্পের জন্য আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা,
৫. নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন, এবং
৬. গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করা।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বড় সতর্কবার্তা। আমরা শঙ্কিত, আমাদের বৈদেশিক ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন।'
তিনি আরও বলেন, 'এ ধরনের ঘটনা স্পষ্ট করে যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।'
ইএবির সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিজিপিএমইএ, লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস, ফল ও শাকসবজি, ঔষধ শিল্প, জুয়েলারি, সুয়িং থ্রেড, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক, সিল্ক, হস্তশিল্প, ক্রাফট ও গিফটওয়্যারসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধিরা জানান, গত শনিবারের ওই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
হাতেম বলেন, 'রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্য ছাড়াও কাঁচামাল হারানোর কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে, যা আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামনের কয়েকদিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।'
তিনি জানান, 'আমরা সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছি। একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতির চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।'
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, 'আমরা ৩২টি কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে ক্ষতির তথ্য জানতে চেয়েছি। তাদের ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল ভষ্মীভূত হয়েছে।'
তিনি কাস্টমস হাউজে সপ্তাহান্তে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সমালোচনা করে বলেন, '২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হবে, স্বল্প পরিসরেই হোক। প্রয়োজনে আমরা বাড়তি অর্থ দিতে প্রস্তুত।'
জাকির হোসেন সতর্ক করে বলেন, 'এভাবে বন্ধ থাকলে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।'
নিজের কোম্পানির ক্ষতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমার একটি নারকোটিক আইটেম পুড়ে গেছে। এখন আবার আমদানির অনুমতি নিতে হবে, যা তিন থেকে চার মাস সময়সাপেক্ষ। এতে সরবরাহ চেইনে তাৎক্ষণিক ঘাটতি না হলেও আগামী তিন থেকে ছয় মাসে ৩ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ফিনিশড গুডস উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে।'