শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
মঙ্গলবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি) তাদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বাপির মহাসচিব জাকির হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরপরই তারা বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের শীর্ষ ৪৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল এই ঘটনায় পুড়ে গেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির হিসাব যুক্ত হলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ছিল। এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, বেশ কিছু স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলো পুনরায় আমদানি করতে সময় লাগবে, ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হবে।
এছাড়া, যেসব পণ্য অন্যান্য এয়ারপোর্টে নামানো হয়েছে, সেগুলোর সংরক্ষণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাপি। কারণ, এসব কাঁচামাল বিশেষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়—তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটলে সেগুলোও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাপির মতে, পুড়ে যাওয়া পণ্যের একটি বড় অংশ ছিল নারকোটিক্স বিভাগ থেকে অনুমোদিত কাঁচামাল, যেগুলো পুনরায় আমদানির ক্ষেত্রে জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ফলে, উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই প্রাথমিক ক্ষতির হিসাব বাড়তে পারে, কারণ প্রতিটি কাঁচামাল একাধিক ফিনিশড প্রোডাক্ট উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সেই হিসেবে, কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০টি কোম্পানি সক্রিয়ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এসময় ফার্মা খাতের ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংকট এড়াতে এবং এই খাতের সুরক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর ও সঠিক নির্দেশনার প্রত্যাশা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেসব বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পুড়ে যাওয়া পণ্যের শুল্ক, ডিউটি ট্যাক্স ও ভ্যাট ফেরত; এলসি সংক্রান্ত ব্যাংক চার্জ, সুদ মওকুফ; পুনঃআমদানীর ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ যেন কোনো মার্জিন, ব্যাংক চার্জসমূহ অথবা সুদ যেন দাবি না করে; এছাড়া আরও অন্যান্য সুদ, চার্জ মওকুফ করে নতুন কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করে দেওয়াসহ মোট ১৪ টি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাপি।