মিরপুরে আগুন: লাশের জন্য মর্গের সামনে স্বজনদের অপেক্ষা

মিরপুরের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ শ্রমিকের স্বজনেরা বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। কেউ কেউ প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করেছেন, আবার অনেকে এখনো অপেক্ষায়- শনাক্তকরণ ও ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজদের একজন আবদুল আলীম (১৩)। তার পিতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'সংসারে অভাব অনটন। ছেলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আমি সবজি কেনাবেচা করি, মিরপুরেই থাকি। বেতন আট হাজার টাকা। ১৩ তারিখ বেতন দেয়- আজই ছেলের প্রথম বেতন পাওয়ার কথা ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'বারোটার দিকে শুনলাম আগুন লেগেছে। তখন থেকেই খোঁজা শুরু করি। পরে হাসপাতালে আসতে বলে। সকাল ৭টা থেকে বসে আছি, এখনো কিছু পাইনি। লাশ চিনতেও পারিনি। ডিএনএ টেস্ট করে যেন দ্রুত লাশগুলো হস্তান্তর করে। লাশগুলো ফ্রিজেও রাখা হয়নি।'
বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সামনে নিহতদের স্বজনদের ভিড় বাড়তে থাকে। নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৯ জনের লাশ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা, তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বজনরা।
অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া নারগিস আক্তার (১৮) কাজ করতেন আগুন লাগা ভবনের দোতলায় অবস্থিত স্মার্ট প্রিন্টিং নামের টি-শার্ট প্রিন্টিং কারখানায়। সন্ধ্যায় তার বাবা বলেন, 'বারো দিন হলো মেয়ে কাজ শুরু করেছে। মেয়ের কাছে ফোন ছিল না। ছোট মেয়ে বলল- আপা যে গার্মেন্টসে কাজ করে সেখানে আগুন লেগেছে। তখন অন্য এক সহকর্মীর মাধ্যমে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। দৌড়ে কারখানায় যাই।'
তিনি আরও বলেন, 'মেয়েরে এসএসসি পাস করাইসিলাম। মেয়ে কাজে গেছে সাড়ে ৮টায়, আমি ঘুম থেকে উঠসি ৮টায়। আগের রাতে কথা হয়েছে। আমি ভাবছিলাম সকালে বলব- যখন যাবি, আমারে ডাক দিস। কিন্তু আলস্য করে আর বলি নাই। আর কখনো বলার সুযোগও পাই নাই।'
তিনি কণ্ঠ ভার করে বলেন, 'লাশ চিনতে পারসি মেয়ের। কিন্তু কখন দিবে কিছু বলে নাই। সকাল থেকে বসে আছি। অন্তত বলুক- পাঁচ ঘণ্টা পর দিবে, তাহলে সেভাবেই অপেক্ষা করি।'
অন্যদিকে, আরএন ফ্যাশন কারখানায় কাজ করতেন ফারজানা (১৮)। তার বড় ভাই আজী নূর বলেন, 'কাপড়ের ছবি আর নুপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্ত করেছি। কিন্তু তারা বলেছে, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ দেওয়া হবে না।'
খালিদ (৩০) বরগুনার বাসিন্দা। তিনি দুই মাস ধরে ওই কারখানায় কাজ করছিলেন। তার মামা হুমায়ুন কবির বলেন, 'ভোরে খালিদ মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে এক মিনিট কথা বলে কাজে যায়। ওই সময়ই শেষ কথা হয়। এখনও লাশ শনাক্ত করতে পারিনি।'
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের সামনে নিহতদের তথ্য লিপিবদ্ধকারী রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুখলেছুর রহমান সন্ধ্যায় টিবিএস-কে বলেন, 'নিহত ১৬ জনেরই সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের ফরেনসিক প্রতিবেদন চলছে। ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।'