অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৬০ জন, আহত ৮ হাজারের বেশি

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৬০ জন নিহত ও ৮ হাজার ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনটি জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং রাজনৈতিক সংঘর্ষ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন, মব সহিংসতা এবং ধর্মীয় স্থানে হামলার ঘটনা বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটে—এ সময় ৮৮ জন নিহত ও ৫ হাজার ৩৩৭ জন আহত হন। বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও ১ হাজার ১৪১ জন আহত, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১২ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত, আর এনসিপির দ্বন্দ্বে ৬২ জন আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক পরিচয় অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে বিএনপির ১০৪ জন, আওয়ামী লীগের ৩৮ জন, জামায়াতের ৩ জন, এনসিপির ১ জন এবং পার্বত্য এলাকার ইউপিডিএফ সংগঠনের ১০ জন রয়েছেন। এছাড়া ৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এইচআরএসএস জানিয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতার পেছনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিশোধপরায়ণতা, সমাবেশকেন্দ্রিক সংঘর্ষ, দলীয় কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখলের মতো কারণগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ও নারী নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে—যা জনমনে ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তেজনা, ৫–৭ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় সংঘর্ষ, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির 'জুলাই পদযাত্রা' কেন্দ্রিক সহিংসতা এবং আগস্টে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষে একাধিক হতাহতের ঘটনা দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় সহিংসতার মাত্রাও বেড়েছে। ২০২১ সালে ৮২ জন, ২০২২ সালে ৯২ জন এবং ২০২৩ সালে ৯৬ জন নিহত হলেও চলতি বছরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে।
মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়ে এইচআরএসএস বলেছে, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা না হলে সহিংসতা আরও বিস্তার লাভ করবে। সংগঠনটি রাজনৈতিক দল, সরকার, সুশীল সমাজ ও নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।