ব্যবসায়ী-কৃষকদের সমর্থন বেশি বিএনপির, শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীদের পছন্দ জামায়াত: জরিপ

সম্প্রতি একটি জরিপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সমর্থনে পেশাভেদে ভিন্নতা উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির বিএনপির প্রতি সমর্থন বেশি। আর শিক্ষার্থী ও বেসরকারি চাকরিজীবী শ্রেণির পছন্দ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের 'জনগণের নির্বাচন ভাবনা' শীর্ষক দ্বিতীয় দফার তৃতীয় পর্বের জরিপে এ ফলাফল উঠে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্মের সহযোগিতায় এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সারওয়ার আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিডিবিএল ভবনে এক অনুষ্ঠানে জরিপের এই ফলাফল তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ–আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর।
গত ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর এ জরিপ পরিচালিত হয়। এতে ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার অংশ নেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৩৯ জন পুরুষ এবং ৪ হাজার ৭১৯ জন নারী।
ব্যবসায়ী ও কৃষকদের বড় অংশ বিএনপির পক্ষে
জরিপে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৩৭.৯ শতাংশ বিএনপিকে এবং ২৪.৩ শতাংশ জামায়াতকে, ১৫.৯ শতাংশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে, ২.৭ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে এবং ১.৬ শতাংশ এনসিপির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আর এ বিষয় কোনো মন্তব্য করেনি ১৫.৪ শতাংশ উত্তরদাতা।
এদিকে কৃষকদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের ৩৯.২ শতাংশ বিএনপি, ২৭.৯ শতাংশ জামায়াত, ১৬.১ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৩.৫ শতাংশ ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ০.৯ শতাংশ এনসিপির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আর মন্তব্য করেননি ১১.৬ শতাংশ ভোটার।
গৃহিণী ও শ্রমজীবীদের মধ্যে বিএনপির ভোট বেশি
গৃহিণীদের মধ্যে ৩৩.৮ শতাংশ বিএনপিকে, ২২.৫ শতাংশ জামায়াতকে, ১৭.২ শতাংশ আওয়ামী লীগকে, ২ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে, ২ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দিতে চান। এ বিষয়ে মন্তব্য নেই ২০.৭ শতাংশ উত্তরদাতার।
শ্রমজীবী শ্রেণিতেও বিএনপির সমর্থন সবচেয়ে বেশি—৩৭.৭ শতাংশ। জামায়াতের ২৬.৬ শতাংশ, আওয়ামী লীগের ১৩.৮ শতাংশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৩.৪ শতাংশ ও এনসিপির প্রতি ১.২ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থন রয়েছে। এ বিষয় মন্তব্য করেননি ১৬.২ শতাংশ উত্তরদাতা।
শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের কাছে এগিয়ে জামায়াত
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জামায়াতের জনপ্রিয়তা বেশি। মোট উত্তরদাতার মধ্যে ২৭.৬ শতাংশ জামায়াতকে, ২৫.৭ শতাংশ বিএনপিকে, ১৩.২ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ১.৬ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে এবং ১১. ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এনসিপিকে বেছে নিয়েছেন। আর মন্তব্য নেই ১৫.৯ শতাংশ উত্তরদাতার।
বেসরকারি চাকরিজীবী ও এনজিও কর্মীদের মধ্যেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব চোখে পড়ার মতো—বিএনপি ৩৪.৪ শতাংশ, জামায়াত ২৮.৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১২.৮ শতাংশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৪.১ শতাংশ ও এনসিপির ১.৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে
বেকারদের বড় একটি অংশের সমর্থন বিএনপিকে
বেকার শ্রেণির মধ্যে বিএনপি ৩৭.৪ শতাংশ, জামায়াতের ২২.১ শতাংশ, আওয়ামী লীগের ১৯.৮ শতাংশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২.৪ শতাংশ ও এনসিপি ১.৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে।
জরিপে বলা হয়, ভোটারদের পেশাভেদে রাজনৈতিক পছন্দে বড় ধরনের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। দলগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। কারণ প্রত্যেক পেশাগত গোষ্ঠীর নিজস্ব অগ্রাধিকার ও প্রত্যাশা রয়েছে।
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর বলেন, 'এই জরিপে দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের পেশা ও সামাজিক অবস্থান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে। দলগুলোর উচিত হবে তাদের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে এই পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নেওয়া।'
রুবাইয়াত সারওয়ার জানান, জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ শতাংশ নারী এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তারা কাকে ভোট দেবেন বা অংশ নেবেন কি না।
জরিপে 'ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান?'— এমন প্রশ্নে উত্তরে দেখা গেছে, নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত এবং তাদের প্রত্যাশার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইস্যু বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
জেনারেশন জেড ভোটারদের মধ্যেও সিদ্ধান্তহীনতা সবচেয়ে বেশি। এই তরুণ ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনো সরকারের কর্মসূচি ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অনিশ্চিত। তারা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের ৩৪ শতাংশই তরুণ । এদের একটি বড় অংশ বলেছে, তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। এছাড়াও বেশির ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।