জামানত দ্বিগুণ করার প্রস্তাব ইসির, বাড়াতে চায় নির্বাচনি প্রচারণার ব্যয়সীমাও


আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণার ব্যয় নির্ধারণে একটি নতুন কাঠামো প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, একজন প্রার্থী ২৫ লাখ টাকা বা ভোটারপ্রতি ১০ টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া প্রার্থীর জামানত বিদ্যমান ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করারও প্রস্তাব করেছে ইসি।
ইসির এসব প্রস্তাব গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। মোট ৪৩টি ধারা ও উপধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করে খসড়াটি ২ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে 'না' ভোট চালু করা, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করা, জোটে থাকলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করা, ইভিএম বাদ দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, 'আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হবে।'
বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ নির্বাচনি ব্যয় নির্ধারিত রয়েছে ২৫ লাখ টাকা। দেশের সব আসনের জন্যই এই সীমা নির্ধারিত আছে। তবে আসনভিত্তিক ভোটারসংখ্যায় বড় ধরনের তারতম্য থাকায় এই ব্যয়সীমা যৌক্তিক নয় বলে মনে করছে ইসি। কারণ, কোনো আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ, আবার কোথাও ৭ লাখের বেশি।
নতুন প্রস্তাবটি যদি গৃহীত হয়, তবে কোনো আসনে ভোটার বেশি হলে প্রার্থী ২৫ লাখ টাকার চেয়ে বেশি খরচ করতে পারবেন। যেমন ৭ লাখ ভোটারের আসনে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'যেকোনো নির্বাচনি আসনে একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে বা ২৫ লাখ টাকা—যেটি সর্বোচ্চ— সেই পরিমাণ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবিলিটি আসবে।'
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান সম্প্রতি ইসির সঙ্গে এক সংলাপে বলেন, 'নির্বাচনি খরচ বা ব্যয়সীমা যেটা আছে, সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমাদের গবেষণায় দেখেছি, প্রতিটি নির্বাচনে ব্যয়সীমার কয়েকগুণ বেশি ব্যয় করছেন প্রার্থীরা।'
তিনি বলেন, 'অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয় হয়েছে নির্ধারিত ব্যায়ের দুইগুণেরও বেশি, এর পরের নির্বাচনে তিনগুণ এবং ১০ম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছে চারগুণ। এই যে বেশি ব্যয় হচ্ছে, এটাকে চেক দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে প্রার্থী তার ব্যায়ের হিসাব নির্বাচনে কমিশনে জমা দেন। তবে এটা জনসমক্ষে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই। এটা বাধ্যমূলক থাকতে হবে।'
বদিউজ্জামান নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তি প্রয়োগ নিশ্চিত করতেও ইসির প্রতি আহ্বান জানান।
প্রার্থীর জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাবও দিয়েছে ইসি। এখন সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে চাইলে ২০ হাজার টাকা ইসিতে জমা রাখতে হয়। নির্দিষ্ট আসনের মোট গৃহীত ভোটের ১২.৫ শতাংশের কম ভোট পেলে ওই অর্থ আর ফেরত পাওয়া যায় না, যা জামানত বাজেয়াপ্ত নামে পরিচিত।
প্রসঙ্গত ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো আরপিও জারি হয়। এ নিয়ে এতে অন্তত ১৪ বার নানা ধরনের সংশোধন এসেছে।
ইসি জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে। আর তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে।