Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
October 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, OCTOBER 02, 2025
যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি, ভুয়া বিজ্ঞাপন: তাসনিম জারাকে ঘিরে যেভাবে চলছে সাইবার হয়রানি

বাংলাদেশ

ডিসমিসল্যাব
01 October, 2025, 12:00 pm
Last modified: 01 October, 2025, 01:02 pm

Related News

  • মানুষ পেশিশক্তির রাজনীতি আর দেখতে চায় না: তাসনিম জারা
  • কক্সবাজার ছেড়েছেন এনসিপি নেতারা
  • দুর্বল পাসওয়ার্ড থেকে হ্যাকারদের হামলায় যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেল ১৫৮ বছরের কোম্পানি
  • যাচাই হওয়ার পরও ছড়াচ্ছে ড. ইউনূসের প্রশংসা করে ট্রাম্পের ভুয়া বক্তব্যের ভিডিও
  • ভারতে বাংলাদেশের ৬ টিভির ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ

যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি, ভুয়া বিজ্ঞাপন: তাসনিম জারাকে ঘিরে যেভাবে চলছে সাইবার হয়রানি

ডিসমিসল্যাব
01 October, 2025, 12:00 pm
Last modified: 01 October, 2025, 01:02 pm
ছবি: ডিসমিসল্যাব

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ডা. তাসনিম জারাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা প্রচারণার প্রবণতা দেখা গেছে। দিন দিন এই অপপ্রচারের পরিমাণ বাড়ছে, আরও পরিকল্পিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। 

রিসার্চ অফিসার ফাতেমা তাবাসুমের নেতৃত্বে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ডিসমিসল্যাব মার্চ থেকে আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে জারাকে উদ্দেশ্য করে প্রচারিত মোট ৬২টি ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছে। এসব পোস্টে বিভিন্ন সম্পাদিত ছবি, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারমূলক ফটোকার্ড, ভুয়া ওষুধের বিজ্ঞাপন এবং এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

পোস্টগুলোর ভাষা খুবই আক্রমণাত্মক, অবমাননাকর এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ – যার প্রত্যেকটিই ফেসবুকের নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। তাসনিম জারার ছবি ব্যবহার করে যৌন রোগের ওষুধের ভুয়া বিজ্ঞাপনও নজরে এসেছে।

গবেষণা চলাকালীন এই ৬২টি পোস্ট ২৯ হাজার ৬৯৩ বার শেয়ার, ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ বার দেখা হয়েছে। এতে ৪ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া ও ৩৪ হাজার ৯৫৭টি মন্তব্য পড়েছে, যার অধিকাংশই ছিল অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ।

ডা. তাসনিম জারাকে ঘিরে এই অপপ্রচার বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী রাজনৈতিকদের বিরুদ্ধে অনলাইন আক্রমণের চিরাচরিত প্রবণতাকেই সামনে নিয়ে আসে। নারী রাজনৈতিকেরা নিয়মিত যৌন হয়রানি, ইঙ্গিতপূর্ণ কটূক্তি ও মানহানির শিকার হন। এর আগে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি অনলাইনে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এই প্রবণতা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনীতিতে সক্রিয় নারীরা অনলাইনে নানা ধরনের বিকৃত আক্রমণের শিকার হওয়ার কারণে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া থেকে অনেক সময় নিজেদের গুটিয়ে রাখেন।

সম্পাদিত ছবির ব্যবহার

গত ৫ আগস্ট, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির দিনে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা কক্সবাজারে ভ্রমণে গেলে, তাদের ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নানান আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। এই পাঁচ নেতা হলেন, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তাসনিম জারার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহও ছিলেন সেখানে।

পরিবর্তিত ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি ব্যবহার করে দেওয়া পোস্টের স্ক্রিনশট

ঠিক পরদিন থেকে এই ভ্রমণকে ঘিরে জারাকে ট্রল ও বুলিং করে একাধিক পোস্ট দেখা যেতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে, মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকে ৬ আগস্ট জারার ছবি দিয়ে লেখেন, "তোমাদের ভাবী এখন কক্সবাজার ৩ জনের সাথে একজন🥱🙃।" 

রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ছবিটি আসলে অন্য এক নারীর। গত ১৫ জুন একটি ভিন্ন ফেসবুক প্রোফাইলে মূল ছবিটি পোস্ট হয়েছিল। পরে সেটির মুখ সম্পাদনা করে সেখানে জারার ছবি বসানো হয়।একই অ্যাকাউন্ট থেকে এর আগেও একাধিক এডিট করা ছবি শেয়ার করেছিলেন। যার একটি এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে তাসনিম জারার আলিঙ্গনরত ছবি, ক্যাপশনে তার যৌবনকে সিগারেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়; নারীকে পণ্যায়নের আরেকটি উদাহরণ। রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, ছবিটি ভুয়া। মূল ছবিতে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এটি এনসিপির আরেক নেত্রী সামান্তা শারমিনের ফেসবুক প্রোফাইলে খুঁজে পাওয়া যায়। আখতার হোসেনের বদলে সেখানে জারার মুখ বসানো হয়েছিল।

ফেসবুকের একাধিক প্রোফাইল থেকে তাসনিম জারার সম্পাদিত ছবি ছড়ানো হয়েছে। যাচাইকৃত ৬২টি পোস্টের মধ্যে ২০টি পোস্টেই অন্য নারীর শরীরে ডা. তাসনিম জারার মুখ সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে। অর্থাৎ সরাসরি ছবি বিকৃতি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। 

আবার ২৩টি পোস্টে জারার মূল ছবি ব্যবহার করা হলেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে মানহানিকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা। শুধু আগস্ট মাসেই এমন ২০টি পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে, যা কোনো নির্দিষ্ট মাসে সর্বাধিক।প্রায় ১১ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ 'ডা. তাসনিম জারা ফ্রেন্ডস ক্লাব – DR Tasnim Jara'-এ একটি ছবি পোস্ট করে প্যাকেজ সংবাদ নামে একটি পেজ। ক্যাপশনে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা ("সহবাস কোর্স") স্পষ্ট।

মূল বনাম ভুয়া: জারার ছবি বসিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা

রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটির মূল উৎস একটি ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল। মূল ছবিটি সম্পাদনা করে জারার মুখ বসানো হয়েছে। 

অনেক ক্ষেত্রে, ডা. তাসনিম জারার নিজের প্রোফাইল থেকে নেওয়া ছবি ব্যবহার করে তাকে এনসিপি বা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে বসানো হয়েছে।

মূল বনাম ভুয়া: জারার ছবি বসিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা

জুন মাসে একটি সম্পাদিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩) ব্যবহৃত ছবিটিতে তাকে ও তার পাশে দাঁড়ানো আরেকজন নারীকে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দেখা যায়। ছবির ক্যাপশনে ধর্মীয় ইঙ্গিতপূর্ণ কটূক্তি করা হয়। ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমার স্ক্যানার একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা জানায়, ছবিটি আসল নয়; বরং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পাদনা করে দুজনকে হাফপ্যান্ট পরানো হয়েছে।

মূলধারার সংবাদমাধ্যম জারার সম্পাদিত ছবি ব্যবহার করে ইঙ্গিতপূর্ণ শিরোনাম দিয়ে পাঠক টানার চেষ্টা করেছে
ওই ঘটনার পর মূলধারার দুই গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাক ও কালের কণ্ঠ ছবিটি ঘিরে দুটি ফটোকার্ড ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে তাদের শিরোনাম ছিল মিসলিডিং বা বিভ্রান্তিকর– যেমন, "ডা. তাসনিম জারার হাফপ্যান্ট পরা ছবি ভাইরাল" বা "যা জানা গেল"।

কোনো প্রতিবেদনের শিরোনামেই ছবিটি এআই-নির্ভর বা ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয়নি, বরং পাঠকের মধ্যে সন্দেহ ও কৌতূহল জাগানোর মতো ইঙ্গিত রাখা হয়েছিল। গত ৬ জুলাই নিজের প্রোফাইল থেকে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন তাসনিম জারা। অভিযোগ তোলেন, হাফ প্যান্ট পরা সেই সম্পাদিত ছবি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে তার প্রতিপক্ষ তো বটেই, তাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ও অবমাননা ছড়াচ্ছে কালের কণ্ঠ ও ইত্তেফাকের মতো মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোও। তার মতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন ছবি ও ভিডিও ‍শুধু নারী হিসেবে অবমাননাকরই নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও।

গণমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড

ডিসমিসল্যাব ৬২টি ফেসবুক পোস্টের মাঝে বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, দৈনিক সমকাল, যুগান্তর, চ্যানেল ২৪ ও যমুনাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে একাধিক ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে।

এক ব্যবহারকারী গত ৬ আগস্ট চ্যানেল ২৪ এর একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ৫ আগস্টের সেই কক্সবাজারে ভ্রমণের দুটি ছবি ব্যবহার করে তাসনিম জারাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিতপূর্ণ ক্যাপশন দেওয়া হয়। সাথে জুড়ে দেয়া হয় এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলমের নামও। 

যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শিরোনাম ও মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে ছড়ানো ভুয়া ফটোকার্ড

অনুসন্ধানে জানা যায় চ্যানেল ২৪ -এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে এমন কোনো খবর প্রকাশ করেনি।

কক্সবাজারে তাসনিম জারা তার দলের নেতা-কর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন– এ ধরনের দাবি করে দৈনিক সমকাল ও যমুনা টেলিভিশন– এর নাম, ডিজাইন ও লোগো ব্যবহার করে দুটি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে। 

আরেক ব্যবহারকারী গত ৭ আগস্ট নিজের ফেসবুকে সমকাল-এর নাম, লোগো ও তাসনিম জারার ছবিসহ একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে লেখেন, "তিন বন্ধু মিলে কক্সবাজার হোটেলে ধর্ষণ করলো জাতীয় নাপা পাঠির যৌনও নেত্রী তাসনিম জারা কে।" ফটোকার্ডে তাসনিম জারার একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সমকাল-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট বা ই-পেপারে এমন কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি। তাসনিম জারা নিজেও এমন কোনো অভিযোগ করেননি। 

মূল বনাম ভুয়া: জারার ছবি বসিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা

আটটি ফটোকার্ডের একটি তৈরি করেছে স্যাটায়ার পেজ 'বালের কণ্ঠ', যা দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর নাম ও লোগো নকল করে বানানো। ৬ আগস্ট পেজটি থেকেই ফটোকার্ডটি 'Durgapur Helpline and Buy Sell (দুর্গাপুর হেল্পলাইন)✅' নামে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হয়। এতে তাসনিম জারাসহ এনসিপির আরও চার শীর্ষ নেতার ছবি পাশাপাশি বসানো হয় এবং ক্যাপশনে লেখা হয়, "দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার তাসনিম জারা।" কিন্তু কালের কণ্ঠ-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট বা ই-পেপারে এমন কোনো খবর নেই। 

এর বাইরে তাসনিম জারার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে সংবাদ মাধ্যমের একটি আসল ফটোকার্ডও ব্যবহার করা হয়, তবে পোস্টে ভুয়া তথ্য তুলে ধরে। যেমন চার লাখের অধিক সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ "Supporters of Bangladesh Awami League (সাপোর্টার্স অফ আওয়ামী লীগ)"-এ এক সদস্য ডিবিসি নিউজের একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে লেখেন, "এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা কে সাগর দেখাবে বলে কক্সবাজারে চিপায় চাপায় নিয়ে যাচ্ছেন এনসিপির নেতারা। বিস্তারিত লিংক কমেন্টে।" কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফটোকার্ডটি আসল। ৫ আগস্ট সহকর্মীদের সঙ্গে স্বামীকে নিয়ে তাসনিম জারার কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে ৬ আগস্ট ডিবিসি নিউজ তাদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে প্রকাশ করে। তবে আলোচিত ক্যাপশনটি ডিবিসি নিউজের মন্তব্য নয়, এটি পোস্টদাতার মনগড়া।

সম্পাদিত ভিডিওর ব্যবহার

শুধু ছবি নয়, তাসনিম জারার ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণ করা পোস্টগুলোর মধ্যে চারটিতে তার ভিডিও সম্পাদনা করে ভিন্নভাবে প্রচার করা হয়েছে।

গত ৮ জুলাই এস কে বেলায়েত হোসেন নামে এক ব্যবহারকারী আট সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, এক নারী জারার কাছে জানতে চান তিনি কত টাকার বিনিময়ে সঙ্গ দেন। কথিত উত্তরে জারাকেও একটি অঙ্ক বলতে দেখা যায়, যদিও অডিওটি ভুয়া। 

ভিডিও ক্লিপটির কি-ফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ক্লিপটি জারার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া। আসল ভিডিওতে তিনি "রাগ কমানোর উপায়" নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। প্রথম চার সেকেন্ড কেটে নিয়ে অডিও বদলে দেওয়া হয়েছে। আসল ভিডিওটি ছিল গর্ভধারণ নিয়ে, যা প্রায় চার বছর আগে প্রকাশিত। ওই ভিডিও থেকে অংশ কেটে নিয়ে তাতে অডিও সম্পাদনা করে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে।

পরিবর্তিত ভিডিওর স্ক্রিনশট

একইভাবে একটি ভিন্ন পেজ থেকে জারার আরেকটি ভিডিও সম্পাদনা করে অন্য এক ব্যক্তির ভিডিওর সঙ্গে যুক্ত করে পোস্ট করা হয়েছে । সেখানে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, "এই আপা আগে করার কথা বলতেন, এখন তিনি নিজেই করছেন। রাজনীতি।"

জারার মূল ভিডিওটি তার চ্যানেলে খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। যেখানে চিকিৎসক জারা "গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়মগুলো কী কী?" বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে ভিডিওটি তৈরি করেছিলেন আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে। 

আরেকজন ব্যবহারকারী এই ভিডিওর ছয় মিনিটের অংশ কেটে তাতে নতুন ক্যাপশন সম্পাদনা করে লেখেন: "আমি ডা. তাসনিম জারা ক্ষমতার জন্য আসিনি, মেধাবীদের সহবাসের নিয়ম শিখাতে এসেছি।"

এআই ভিডিও ও ফেক অডিও ব্যবহার

তাসনিম জারার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে এআই প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যেখানে এআই দিয়ে তার ছবি বিকৃত করা হয়েছে।

একটি প্রোফাইল থেকে, জারার পাঁচ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে জারাকে সাঁতারের পোশাকে দেখা যায়, যেখানে ক্যাপশনে জারাকে নিয়ে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য লেখা হয়। একজন ব্যবহারকারী জারার একটি ছবি পোস্ট করে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও ভিত্তিহীন সমালোচনা করেন।

ভিডিওটি বিশ্লেষণে, এর ডান পাশে এক কোনায় 'পিক্সভার্স এআই'-এর নাম দেখা যায়। পিক্সভার্স এআই প্রযুক্তি দিয়ে সাধারণত ছবি থেকে ভিডিও তৈরি করা যায়। এছাড়াও ভিডিওতে ব্যবহৃত ছবিটি জারার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়াও আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে তাসনিম জারা ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের একটি চুম্বন দৃশ্যের ভিডিও পোস্ট করেন। ছয় সেকেন্ডের ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে ০০:০২ সেকেন্ড অংশে দেখা যায়, জারার হাতে পাঁচ নয়, ছয়টি আঙুল; যা এআই তৈরি ভিডিওর সাধারণ ত্রুটি। আসল ছবিটিও পাওয়া যায় তার ভেরিফায়েড প্রোফাইলে।

শুধু ডিপফেক নয়, ফেক অডিও ব্যবহার করেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে জারাকে লক্ষ্য করে। একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩ আগস্ট একটি ভিডিও পোস্ট হয়, যেখানে জারার ছবি ও একজন ব্যক্তির ছবি দেখা যায় এবং ১২ মিনিটের একটি ফোনালাপ শোনা যায়। ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি জারার 'প'র'কী'য়া প্রেমের হ'ট ফোন আলাপ'। ভিডিওটি এখন ৪ লাখ ৯৩ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে।

যদিও পুরো কথোপকথনে কোথাও জারার বা অপর ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে ব্যক্তির ছবি জারার এই ফোনালাপের ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি ২০২০ সালের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার জয়ী সাদাত রহমান। 

প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনে জারার ছবি ও নামের ব্যবহার

৬২টি যাচাইকৃত পোস্টের মাঝে ১৭টি পুরুষের যৌন রোগের বিজ্ঞাপনের পোস্ট । এই পোস্টগুলো জারার নাম, পরিচয়, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ১৪টি পৃথক পেজ থেকে করা হয়েছে। বিজ্ঞাপন পোস্টগুলোর কোথাও দাবি করা হচ্ছে, পুরুষের যৌন রোগের সমাধান নিয়ে এসেছে ডা. তাসনিম জারার প্রচার করা এক ওষুধ। আবার কোথাও বলা হচ্ছে, ওজন বৃদ্ধি বা পাইলস রোগের জন্য ডা. তাসনিম জারা এনেছেন দুর্দান্ত সমাধান। বিজ্ঞাপনগুলো পুরুষদের যৌন রোগের ওষুধের বিজ্ঞাপন বা পাইলস রোগের ওষুধের বিজ্ঞাপন, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে ডা. তাসনিম জারার ছবি বা ভিডিও। এই ১৭টি বিভ্রান্তিকর পোস্ট এখন পর্যন্ত মোট ৫০৪ বার শেয়ার হয়েছে, ২৯ হাজার ৫৫৫টি প্রতিক্রিয়া পেয়েছে এবং ৫ লাখ ৪৩ হাজার বার দেখা হয়েছে।

ওষুধ বিক্রিতে জারার ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে

ইতোপূর্বেও জারার নাম, পরিচয় ও খ্যাতি ব্যবহার করে ভুয়া ওষুধ বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সময় ড. জারা তার ভেরিফায়েড পেজ, 'ড. তাসনিম জারা' থেকে একটি স্পষ্ট বিবৃতিতে জানিয়ে ছিলেন, তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে যৌন রোগের ওষুধ ছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণ, পাইলস, লম্বা হওয়ার ওষুধ বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে অনলাইনে। জারা এইসব কার্যক্রমকে "প্রতারণা" বলে আখ্যা দেন। 

তিনি বলেন, এসব পণ্যে বা সেবায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা রয়েছে। জারা আরও জানান যে, তার সব ভেরিফায়েড হ্যান্ডেলে নীল টিক চিহ্ন আছে। তাই নীল টিক ছাড়া কোনো পেজ বা প্রোফাইলে তার ছবি ও নাম ব্যবহারে দেয়া বিজ্ঞাপন প্রতারণামূলক এবং তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন জারা।

সাম্প্রতিক এই যৌন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনগুলিও একই ধরনের প্রতারণার ধাঁচ অনুসরণ করছে। এসব প্রচার চালানো পেজের কোনোটি মেটা-ভেরিফাইড নয়, যা স্পষ্ট করে এগুলো জারার নয়। অর্থাৎ এইগুলোও বিজ্ঞাপনগুলো প্রতারণামূলক।

কারা ছড়াচ্ছে এই টার্গেটেড ডিসইনফরমেশন

ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬২টি পোস্টের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৪০টি) ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইল থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা স্পষ্টত বা আংশিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সমর্থক। গত বছর দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন দলটি ক্ষমতাচ্যুত হয়, যা মূলত এনসিপির শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে শুরু ও পরিচালিত হয়েছিল। ডা. তাসনিম জারা বর্তমানে এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বাধীন পদে আছেন। 

তাসনিম জারার সবচেয়ে বেশি সম্পাদিত ছবি শেয়ার করেছেন মো. সাইফুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি মে মাসের ২ তারিখ হতে আগস্ট মাসের ৭ তারিখ এর মাঝে জারার অন্তত ২০টি ছবি পোস্ট  করেছেন, যার মধ্যে ১৮টি ছিল সম্পাদিত। সাইফুল তার বায়োতে উল্লেখ করেছেন, "জয় বাংলার সৈনিকেরা পাশে থাকবেন।" এছাড়াও তার কভার ফটোতে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের সাবেক দলীয় প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেয়া রয়েছে। 

এছাড়া আওয়ামী লীগ, ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুজিববাদী লীগ, কিংবা নিজেদের মুজিব সৈনিক দাবি করা একাধিক পেজ ও প্রোফাইল হতেও তাসনিম জারাকে নিয়ে সম্পাদিত ভিডিও, ফটোকার্ড কিংবা ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি ছড়িয়েছে। বাকি নয়টি প্রোফাইল বা পেজের মাঝে একটি স্যাটায়ার পেজ হলেও বাকিগুলোর পরিচয় নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি।

সবচেয়ে পু্রোনো প্রোফাইলটি চালু হয়েছে ১৯ জুলাই ২০০৯ সালে, আর সর্বশেষ প্রোফাইলটি তৈরি হয়েছে ২৪ জুলাই ২০২৫-এ। 

মোট ৬২টি পেজ/প্রোফাইলের মধ্যে ৫৭টির পরিচালনা করতেন ১৩৩ জন অ্যাডমিন। বাকিগুলোর প্রায় সবই প্রোফাইল যেগুলোর ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাডমিন অবস্থান পাবলিক রাখেননি। ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি ডেটা অনুযায়ী, এই অ্যাডমিনদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (১০২ জন) বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ২২, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে প্রতিটিতে ৩ জন করে, আর ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পর্তুগালে আছে একজন করে।

অনলাইনে নারী রাজনীতিবিদদের কেন হয়রানির শিকার হতে হয় 

২০২৪ সালে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে অনলাইনে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। ওই নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সেই সময় ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক থেকে 'মাহি', 'ভোট' ও 'মাঝখানে' শব্দ নিয়ে নির্বাচনী বিষয়ক ৬০টি ভিডিও বাছাই করে সেগুলোর ধরন বিশ্লেষণ করেছিল ডিসমিসল্যাব। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল, ওই ভিডিওগুলোর মধ্যে ১৫টি ছাড়া বাকিগুলোর শিরোনাম, ক্যাপশন বা ভিডিওতে মাহির জন্য ভোট প্রার্থনার আড়ালে যৌনাত্মক ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা ব্যবহার করা হয়েছিল। 

এখানে প্রসঙ্গ যদিও নির্বাচন ছিল, তবে সেসময় জেন্ডার ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরীন ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছিলেন, কাউকে ছোট করা বা তাঁর প্রার্থিতা নাকচ করার জন্য অস্ত্র হচ্ছে তার যৌনজীবন ও 'চরিত্র' নিয়ে ‍প্রশ্ন তোলা। এ ক্ষেত্রে ভালো মেয়ে-খারাপ মেয়ে বিভাজন কাজ করে। খারাপ মেয়ে মানে যৌন আচরণের বিচারে খারাপ। মেয়ের ক্ষেত্রে সেটাই চরিত্রের মাপকাঠি। 

ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমসের ২০২১ সালের "বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নাগরিকভাবে সক্রিয় নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইন সহিংসতার মূল্যায়ন" শীর্ষক গবেষণায় টুইটার (বর্তমানে এক্স), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের ৫৫৩টি ইংরেজি এবং ১৫৮টি বাংলা পোস্ট বিশ্লেষণ করা হয়। যে গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনীতিতে সক্রিয় নারীরা অনলাইনে নানা ধরনের অপমানজনক ও বিকৃতকরণমূলক কন্টেন্টের শিকার হন, যা তাদের "পাবলিক ও ব্যক্তিগত ইমেজ অতিরঞ্জিত ও বিকৃত করে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া থেকে নিরুৎসাহিত" করে। গবেষণায় "উচ্চপ্রোফাইল নারী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর" একটি কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, "তাদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম শেয়ার ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য অবমাননা ও মনোবল ভাঙার চেষ্টা।"

বাংলাদেশে নারী রাজনীতিবিদদের প্রতি অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণ বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা, এমনটিই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সহকারী অধ্যাপক মালিহা তাবাসসুম। তার মতে, তাসনিম জারার মতো নারী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে আক্রমণের মূল কারণ তাদের জেন্ডার বা নারী নেতৃত্ব।

মালিহা তাবাসসুম মনে করেন, "এটি কেবল ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়া যা নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে খর্ব করে এবং তাকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবার বন্দী করতে চায়।"

তিনি সতর্ক করে বলেন, এ কারণে অনেক মেধাবী নারী রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী হলেও ভয় ও লজ্জার কারণে পিছিয়ে যেতে পারেন, "এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি, কারণ জনগণের অর্ধেকের মতামত এবং অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে যায়।"

সামাজিক প্লাটফর্মের নীতিমালা লঙ্ঘন

যে পোস্টগুলো এ প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তার অনেকগুলোই ফেসবুকের হেটস্পিচ বা ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক কথাসংক্রান্ত নীতিমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। 'বুলিং' বা শাসানিসংক্রান্ত নীতিমালা সম্পর্কেও একই কথা খাটে।

লিঙ্গভিত্তিক গোঁড়া চিন্তাধারা, ঘৃণা, অবমাননাকর ভাষা, এক্সক্লুশন (বর্জন করা) বা সেগ্রিগেশনের (বিচ্ছিন্ন বা একঘরে করে রাখা) আহ্বান, সবগুলোই ফেসবুকের নীতিতে বিদ্বেষমূলক কথা। 

নীতিমালা বলছে, ফেসবুকে এমন কথা বলা যাবে না, ইঙ্গিতে বলাও নিষেধ। তা ছাড়া লেখা বা ছবিতে এমন সাধারণীকরণ থাকতে পারবে না, যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে (তার জেন্ডার ভেদে) হেয় করে উপস্থাপন করে। একইভাবে যৌন আচরণসম্পর্কিত অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

জারাকে নিয়ে বানানো যৌন বুলিং বা হেয়পূর্ণ পোস্টগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের নীতিমালা কেন প্রযোজ্য হয়নি তা স্পষ্ট নয়। 

অন্যদিকে, বিজ্ঞাপনের নীতিমালা অনুযায়ী "অগ্রহণযোগ্য ব্যবসায়িক আচরণ" (Unacceptable business practices) -এ মেটা উল্লেখ করেছে যে, কোনো বিজ্ঞাপন "বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে এবং ভ্রান্তিকর কৌশল প্রয়োগ করে মানুষকে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে না"। অর্থাৎ, জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তির ছবি বা পরিচয় ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকরভাবে মানুষকে লোভ দেখানো বা আকৃষ্ট করার চেষ্টা নিষিদ্ধ। তবুও বিনা বাধায় মেটা অ্যাড লাইব্রেরীতে চলছে তাসনিম জারার নাম পরিচয় ব্যবহার করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভিন্ন যৌন রোগের ওষুধের বিজ্ঞাপন।

এ বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাসনিম জারা বলেন, "আমি অনেক বছর ধরেই স্বাস্থ্যবিষয়ক জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করি। তখনও ট্রল ছিল, আমাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হতো, কিন্তু সেগুলো তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল। রাজনীতিতে আসার পর থেকে এর মাত্রা ও প্রকৃতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন একটি সুসংগঠিত প্রচারণা চলছে, আমাকে নীতি-নৈতিকতাহীন মানুষ হিসেবে দেখানোর জন্য।"

তিনি বলেন এআই দিয়ে বানানো কিংবা সম্পাদিত এসব ছবি, ভিডিও, বিকৃত ফটোকার্ড ছড়ানোর উদ্দেশ্য কেবল তার চরিত্র হনন নয়, বরং সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। মানুষ যেন ভাবে, রাজনীতি নোংরা জায়গা, সৎ ও যোগ্য মানুষ এখানে টিকে থাকতে পারে না।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মক্ষেত্র কিংবা রাজনীতিতে নিজেকে কতটুকু অনিরাপদ মনে করেন বিষয়ে- জানতে চাওয়া হলে জারা জানান, সবটাই মিথ্যা, তাই নিজেকে 'আনসেফ' অনুভব করেন না। তবে চিন্তিত এই ভেবে যে আজ তাকে নিয়ে হচ্ছে, কাল হয়তো যেকোনো সাধারণ নাগরিককেও একইভাবে লক্ষ্য বানানো হতে পারে। নারী হিসেবে শুধু তিনি একা নন, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নতুন করে রাজনীতিতে যোগদান করা প্রায় সকল নারী ব্যক্তিত্বকেই অনলাইনে বুলিং ও চরিত্র হননের শিকার হতে হয়েছে।

জারা মনে করেন, এদেশে পুরুষ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার হয়, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ সাধারণত রাজনৈতিক বা আর্থিক দুর্নীতি ঘিরে হয়। অথচ নারীদের ক্ষেত্রে প্রায় সব আক্রমণ যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, চরিত্র হননমূলক।

এই ধরনের বুলিং ও ট্রলিং মোকাবিলায় তিনি প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে রিপোর্ট করেও তেমন কোনো ফল পাননি বলে জানান। "শত শত ভুয়া পোস্ট, বিজ্ঞাপন, এডিটেড ফটো ও ভিডিও সরানোর জন্য বহুবার রিপোর্ট করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের কাছ থেকে খুব সীমিত সহযোগিতা পাওয়া যায়। ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে, কিন্তু সবসময় দায় এড়িয়ে চলে।" 

হালনাগাদকৃত গবেষণা পদ্ধতি

প্রাথমিকভাবে ডিসমিসল্যাবের চারজন গবেষকের ফেসবুক ফিডে আসা তাসনিম জারাকে নিয়ে ২৭টি হয়রানিমূলক পোস্ট নথিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে, তাসনিম জারার নাম দিয়ে এমন আরও নেতিবাচক, যৌন হয়রানিমূলক ও ব্যক্তিগত আক্রমণের পোস্ট ছড়িয়েছে কিনা তা খুঁজতে ফেসবুক ও মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে "জারা," "ধর্ষণ," "তাসনিম জারা," "কক্সবাজার," ও "এনসিপি" কিওয়ার্ডে অনুসন্ধান চালানো হয়। ২০ আগস্টে করা সার্চের ফলাফল থেকে হয়রানিমূলক পোস্ট এবং সার্চের দিন সক্রিয় প্রতিটি বিজ্ঞাপনসহ আরো ৩৫টি আধেয় পাওয়া যায়। এ নিয়ে মোট ৬২টি কন্টেন্ট পাওয়া যার মধ্যে ৪৫টি ছিল ফেসবুক পোস্ট ও ১৭টি বিজ্ঞাপন।

 

Related Topics

টপ নিউজ

ডিসমিসল্যাব / ডা. তাসনিম জারা / সাইবার অ্যাটাক / যৌন হয়রানি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন
  • ছবি: রয়টার্স
    ‘ব্রেইন ড্রেইন’ এর কবলে যুক্তরাষ্ট্র; ট্রাম্পের নীতির জেরে আজ চাকরি ছাড়ছেন প্রায় ১ লাখ সরকারি কর্মী
  • পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
    ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!
  • অলঙ্করণ: সাইমন আব্রানোভিচ
    কেন শাটডাউনের কবলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার? কোন কোন সেবা বন্ধ থাকবে?
  • ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত
    চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত 
  • ডেনড্রেলাফিস সায়ানোখ্লোরিস সাপের দেহে সবুজ, জলপাই ও নীল রঙের আভা রয়েছে। ছবি: রানা ও সহকর্মীরা (২০২৫)
    বাংলাদেশে বিরল দুই প্রজাতির গেছো সাপের সন্ধান পেলেন গবেষকরা

Related News

  • মানুষ পেশিশক্তির রাজনীতি আর দেখতে চায় না: তাসনিম জারা
  • কক্সবাজার ছেড়েছেন এনসিপি নেতারা
  • দুর্বল পাসওয়ার্ড থেকে হ্যাকারদের হামলায় যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেল ১৫৮ বছরের কোম্পানি
  • যাচাই হওয়ার পরও ছড়াচ্ছে ড. ইউনূসের প্রশংসা করে ট্রাম্পের ভুয়া বক্তব্যের ভিডিও
  • ভারতে বাংলাদেশের ৬ টিভির ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ

Most Read

1
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: ৩ উপজেলায় আক্রান্ত ১১ জন

2
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘ব্রেইন ড্রেইন’ এর কবলে যুক্তরাষ্ট্র; ট্রাম্পের নীতির জেরে আজ চাকরি ছাড়ছেন প্রায় ১ লাখ সরকারি কর্মী

3
পুষ্টিকর ডাবের শাঁসের রয়েছে জনপ্রিয়তা। ছবি: টিবিএস
ইজেল

ডাবের আশ্চর্য শহরযাত্রা!

4
অলঙ্করণ: সাইমন আব্রানোভিচ
আন্তর্জাতিক

কেন শাটডাউনের কবলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার? কোন কোন সেবা বন্ধ থাকবে?

5
ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত 

6
ডেনড্রেলাফিস সায়ানোখ্লোরিস সাপের দেহে সবুজ, জলপাই ও নীল রঙের আভা রয়েছে। ছবি: রানা ও সহকর্মীরা (২০২৫)
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বিরল দুই প্রজাতির গেছো সাপের সন্ধান পেলেন গবেষকরা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net