বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে দেশের ৪৩৮ স্থানে হত্যাকাণ্ড: তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষী

ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলায় দেশের ৪১ জেলার ৪৩৮ স্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৫০-এরও বেশি জেলায় ব্যবহৃত হয়েছে লিথ্যাল ওয়েপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষী হিসেবে দেয়া জবানবন্দিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে তিনি তৃতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। জবানবন্দির একপর্যায়ে তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, জুলাইয়ে হত্যাকাণ্ড বা নৃশংসতা চলল, এসব বন্ধে আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কিনা। আপনি কি তদন্তে পেয়েছেন?
জবাবে সাক্ষী আলমগীর বলেন, "না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড-নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। একইসঙ্গে যারা হত্যা-গুম-জখম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মূলত জুলাই আন্দোলনসহ গত ১৫ বছরে খুন-গুম, নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।"
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন আলমগীর। জবানবন্দিতে তিনি বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তার নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শিত হয় ট্রাইব্যুনালে।
এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আজও জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় ট্রাইব্যুনালে।