অবৈধ জাল ব্যবহারে আহরণের পর প্রায় ৩০% মাছ হারিয়ে যাচ্ছে: মৎস্য উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে আহরণের পর বাংলাদেশ প্রায় ৩০ শতাংশ মাছ হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'সাধারণত জাহাজগুলো লক্ষ্যভিত্তিক মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের অবস্থান খুঁজে পায়, নির্দিষ্ট প্রজাতি ধরে বাকিটা ফেলে দেয়। এইভাবে আমরা অনেক সামুদ্রিক মাছ হারাচ্ছি।'
উপদেষ্টা আরও বলেন, 'অবৈধ জালের কারণে মাছের একটি বড় অংশও নষ্ট হচ্ছে। কখনও কখনও আহরণের পর ক্ষতি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।'
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত জাতীয় সম্মেলন 'টুয়ার্ডস জিরো ফুড ওয়েস্ট অ্যান্ড লস: বিল্ডিং অ্যা সাসটেইনেবল ফুড ভ্যালু চেইন ইন বাংলাদেশ'-এ বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ঢাকাস্থ ডেনমার্ক দূতাবাস, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএএও), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে সম্মেলনটি আয়োজন করছে সিপিডি।
বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, 'বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থায় এক ধরনের বৈপরীত্য বিদ্যমান। ২০২৫ সালের এপ্রিল অনুযায়ী, দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ এখনও মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, অন্যদিকে খাদ্য অতিরিক্ত অপচয় হচ্ছে ও অসমতা ব্যাপক।'
তিনি বলেন, 'আমাদের কৃষকরা তাদের জমিতে উৎপাদন করছেন, কিন্তু তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বা পণ্যের সঠিক সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। শেষ পর্যন্ত তাদের হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।'
উপদেষ্টা মৎস্য খাতের পরিবর্তিত দিকও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'এক সময় বাংলাদেশের মাছের ৬০ শতাংশ নদী, খাল, হাওর ও অন্যান্য জলাশয় থেকে পাওয়া যেত এবং ৪০ শতাংশ আসত চাষ থেকে। এখন ৬০ শতাংশ মাছ আসে চাষ থেকে, ৪০ শতাংশ জলাভূমি থেকে। যদিও মাছের পরিমাণ বেড়েছে, মাছের বৈচিত্র্য কমেছে। এক সময় আমাদের ২৬৭ প্রজাতির দেশজ মাছ ছিল, কিন্তু এখন অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।'
সম্মেলনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের চার্জ দ্য আফেয়ার্স আন্দার্স কার্লসেন; ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএএও)-এর উপপ্রতিনিধি দিয়া সানু; এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)-এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসি উড। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিনও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'গত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবুও বাংলাদেশে অপুষ্টি এবং খারাপ পুষ্টির সমস্যা বিদ্যমান। খাদ্য বিতরণ অসম। তাই খাদ্য অপচয় কমানো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'