ধোপাদিঘির মাছ মারা গেল কীভাবে?

সিলেট নগরের বৃহৎ জলাধার ধোপাদিঘির সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। এ কারণে ধোপাদিঘি ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। তবে একসঙ্গে সব মাছ কীভাবে মারা গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার রাত থেকেই ধোপাদিঘিতে মরা মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। সরেজমিনে আজ সোমবার দুপুরে দেখা যায়, মরা মাছ দিঘি থেকে তুলে নৌকায় করে পাড়ে আনা হচ্ছে। গতকাল রাত থেকেই এসব মাছ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এদিকে, মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ধোপাদিঘির পাড় এলাকায়। তাই ধোপাদিঘির পাড় ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। কী পরিমাণ মাছ মারা গেছে এবং কীভাবে মারা গেছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিষক্রিয়ায় মাছগুলো মারা যেতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রায় ৬ একর আয়তনের এই ধোপাদিঘির ৫ একর জায়গার মালিক সিলেট সিটি করপোরেশন। বাকি এক একর ছিল ধোপাদের মালিকানায়। দীর্ঘদিন বেদখলে ও প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর এই দিঘির ৩.৭৫ একর জায়গা উদ্ধার করে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন ২১ কোটি ৮৫ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ধোপাদিঘির পাড় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে। ২০১৯ সালে এ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালে। ২০২২ সালের ১১ জুন এটির উদ্বোধন করা হয়।
ওয়াকওয়েটি উদ্বোধনের পরই সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর সিটি করপোরেশন জায়গাটি মেসার্স ইষান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ইজারা নেওয়ার পর টিকিট ব্যবস্থা চালু করে। প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয় পাঁচ টাকা। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা। ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ভেতরে চটপটি, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানও বসায়।

গতকাল রোববার রাতে ধোপাদিঘির ওয়াকওয়ে ঘুরতে গিয়ে অনেকেই দিঘিতে মরা মাছ ভাসতে দেখেন। তাদের অভিযোগ, বিষ প্রয়োগে মাছ মারা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজারাদারদের একজন বলেন, 'কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। এখানে নতুন করে মাছ ছাড়া হবে। তাই জাল ফেলা হয়েছিল। জালের আঘাতে মাছগুলো মারা গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'পুকুরে নতুন করে মাছ ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছগুলো পোনা খেয়ে ফেলে। তাই রোববার আমি মাছ ধরার জন্য জাল ফেলি। জালের টানে আঘাত পেয়ে মাছগুলো মারা গেছে।'
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, 'আমি ঢাকায় একটি মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।'
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, 'ইজারাদার প্রতিষ্ঠানই দিঘিতে মাছের পোনা ছেড়েছিল। মাছ মরে যাওয়ার বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। কারো দায় পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'