ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে ফ্রি টেস্ট করবে সরকারি হাসপাতাল

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যু কমাতে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গুর প্রাথমিক টেস্ট (এনএস১) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ ও অন্তঃবিভাগে রেজিস্ট্রেশন করা রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফ্রি টেস্ট করানো হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের তথ্য পর্যালাচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে যেতে দেরি হওয়ার কারণে। বিনামূল্যে টেস্ট সুবিধা চালু করা হলে আক্রান্তরা ডেঙ্গু টেস্ট করতে্ আগ্রহী হবে। এতে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং ডেঙ্গুজনিত কারণে মৃত্যু কমবে।
আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এনএস১ পরীক্ষা ফ্রি করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে সম্মতি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট ফি ৫০ টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালে ফির পরিমাণ ৩০০ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'এটি একটি ভালো উদ্যোগ। অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে সম্মতি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এর আগে অধিক ব্যয়ের কোভিড-১৯ টেস্টসহ ব্যয়বহুল চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি করার প্রস্তাবেও সম্মতি দিয়েছিল সরকার।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বলেন, 'ডেঙ্গু টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিলে মানুষ জ্বরের শুরুতেই টেস্ট করতে আগ্রহী হবে এবং আরও বেশি মানুষ টেস্টের আওতায় আসবে। যত দ্রুত রোগী ডেঙ্গু টেস্ট করবে, তত তাড়াতাড়ি রোগ শনাক্ত হবে এবং তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে ও মৃত্যুর হার কমবে। কারণ ডেঙ্গু রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ায় মৃত্যু বাড়ছে। তাই আমরা ডেঙ্গু টেস্ট ফ্রি করার আবেদন করেছি।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু মৃত্যু পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি ঘটেছে হাসপাতালে ভর্তির মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এর প্রধান কারণ হলো দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা ১১৪টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু পর্যালোচনা করেছি। এর মধ্যে ৬৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, ১৮ জন ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ৫ জন ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং ২৫ জন ৭২ ঘণ্টার পর মারা গেছেন।'
তিনি বলেন, মৃতদের অধিকাংশই দেরিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন—সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন জ্বরে ভোগার পর। ফলে মৃত্যুর আগে তারা হাসপাতালে গড়ে মাত্র আড়াই দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা ও বরগুনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)।
গত বছর দেশে ডেঙ্গিতে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন।