কারওয়ান বাজারের ‘অদৃশ্য হাতে’ ৩০ টাকার সবজি ৭০ টাকা হয়ে যায়: ক্যাব সভাপতি
দেশে খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত দামের পেছনে বিপণন ব্যবস্থার জটিলতা ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এছাড়া, কারওয়ান বাজারের সবজি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমাতে পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়কের পাশে শাকসবজি বিক্রির একটি নতুন হাব চালু হতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত 'ক্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ বিষয়ক' শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
পণ্যের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন, '৩০ টাকার পটল কারওয়ান বাজারের উত্তর গেট দিয়ে ঢোকে। ওই পটলটা বের হয় ৭০ টাকা কেজিতে—আমাদের পাইকারি বা খুচরা বাজারে।'
তিনি বলেন, '১০০ টাকার যে সবজিটা আমি কিনছি, কৃষকরা যদি সেটা থেকে ৮০ টাকা পেতেন, তাহলে আমার-আপনার অত কষ্ট হতো না। কারণ ওই টাকাটা কৃষক পেয়েছেন। কিন্তু কৃষক তো পাচ্ছেন ৩০ টাকা। মাঝখানে ৩০ টাকার জিনিসটা আমি ভোক্তা হিসেবে ১০০ টাকায় কিনছি, অর্থাৎ ৭০ টাকা—এই ৭০ টাকা কোথায় গেল? ৭০ টাকা তো ওই যে, পথে পথে চলে যাচ্ছে।'
এই সমস্যার মূলে রয়েছে দেশের ত্রুটিপূর্ণ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা, যা আধুনিক ও সমবায়ভিত্তিক করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে একটি নতুন উদ্যোগের কথাও জানান ক্যাব সভাপতি। তিনি বলেন, 'আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাওরান বাজারের আদলে ৩০০ ফিটের পাশে একটা হাব তৈরি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই আমরা। সেখানে কৃষকেরা সরাসরি তাদের সবজি বিক্রি করবেন। তাদের কাছে থেকে পণ্য কিনে নিয়ে সরাসরি বাজারে চলে যাবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০ টাকা বা তারও কমে আপনি সেখান থেকে সবজি কিনতে পারবেন।'
'কারওয়ান বাজারে রাত ১২টায় ট্রাক থেকে নামলেই দাম যে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গাটা আমরা ভেঙে দিতে চাচ্ছি, যোগ করেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেন, 'সবজির বাজারে কোনো নির্দিষ্ট কর্পোরেট গ্রুপ সিন্ডিকেট করে না। বরং এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মধ্যস্বত্বভোগীর অদৃশ্য হাত। এই হাতগুলো দেখা যায় না। এখানে আপনার শত শত, হাজার হাজার লোক কিন্তু এখানে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারি, তাহলে এই ফরিয়া, দালাল ও আড়তদার থেকে বের হতে পারব না। বাজারে শৃঙ্খলা আসবে না।'
ক্যাব সভাপতি আরও জানান, তাদের সংস্থা সরাসরি আইন প্রয়োগকারী না হলেও তারা অনিয়ম প্রতিরোধে প্রশাসনিক ও আইনি উভয় পথেই অগ্রসর হবে।
তিনি বলেন, বিএসটিআই এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ক্যাবের কাজ হবে সুনির্দিষ্ট অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে চাপ সৃষ্টি করা।
তিনি আরও বলেন, 'যখন দেখব যে আমাদের এই আইনের মধ্যে কোনো কাজ হচ্ছে না, তখন প্রয়োজনে আপনারা জানবেন যে আমরা সরকারকে হাইকোর্ট থেকে আমরা কোনো ভার্ডিক্ট নেব।'
