রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ভিসির বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত প্রশাসক প্রথা বাতিলসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে গতকাল ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটায় পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সেখানে উপস্থিত হন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, বাতিলকৃত পোষ্য কোটা পুনর্বহাল রাবি শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত তারা ভিসির বাসভবন থেকে সরে যাবেন না। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত প্রশাসক প্রথা বাতিলসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে গতকাল ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আল্টিমেটামের কথা জানানো হয়। এই কর্মসূচির আওতায়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম (জরুরি সেবা ব্যতীত) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
তাদের তিনটি দাবি ছিল- প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত সকল 'প্রশাসক প্রথা' বাতিল করতে হবে; সকল শিক্ষকের জন্য ব্যক্তিগত চেম্বারের সুব্যবস্থা নিশ্চিত এবং শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
এদিকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়ে এসে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এই ধরণের আন্দোলন নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনকে পুঁজি করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাদের দাবি আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে শিক্ষকরা বলছেন, তাদের আন্দোলনের প্রভাব নির্বাচনের ওপরে পড়বে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির সাবেক সমন্বয়ক ও জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, 'দীর্ঘ ৩৫ বছর পর যখন রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, ক্যাম্পাসে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে এসে তাদের (শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী) এই ধরনের আচরণ হতাশাজনক। রাকসু নির্বাচনকে পুঁজি করে তারা তাদের দাবি আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি ক্যাম্পাসের সকল প্রার্থীদেরকে যার যার অবস্থান থেকে এই অযৌক্তির দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।'
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, 'আমরা অনেকদিন থেকেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছিলাম। প্রশাসনের আশ্বাসে ভেবেছিলাম আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। যেহেতু দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সুবিধা বহাল আছে। কিন্তু এতদিনেও না মেনে নেওয়ায়– আমরা ফের কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
এই আন্দোলনে রাকসু নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না না, আমাদের আন্দোলনের জন্য রাকসু নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন নির্বাচনের মতোই অনুষ্ঠিত হবে, আমাদের আন্দোলন আলাদা চলবে। কোনো প্রভাব পড়বে না। আর এখনও সময় আছে, আমাদের দাবি মেনে নিলে, আমরা নির্বাচনের আগেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করব।'
তবে রাকসু নির্বাচনকে পুঁজি করে দাবি আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।