রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে লড়বেন তাসিন খান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়তে যাচ্ছেন তাসিন খান নামে এক নারী শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।
১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে লড়ছেন। সে হিসেবে ৬৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে লড়ছেন।
সব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে তিনি ২১ সদস্যের 'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ' নামে প্যানেল ঘোষণা করেন। এ প্যানেলে ভিপি পদে তিনি লড়বেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাজন আল আহমেদ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহায়ের ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে ক্যাম্পাসের প্রথম বিজ্ঞান ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়।
তাসিন খান বলেন, 'আমরা একটা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এ প্যানেল ঘোষণা করছি। আমরা চাই রাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত অর্থে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা এবং এর সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। রাকসু নির্বাচন আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা সব মতাদর্শের মানুষকে নিয়ে প্রকৃতপক্ষে একটা প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাই।আমরা সব শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর হতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চার পথ সুগম হবে। এখানে সব মতাদর্শের মানুষ তার কথা বলবে। আমরা এই ৭৫৩ একর জায়গায় আর কোনো পেশীশক্তির প্রদর্শন দেখতে চাইনা। আমরা চাই, এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা হোক।'
জুলাই আন্দোলনের বিষয়ে তাসিন খান বলেন, 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি সাধারণ জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ এসেছিল। তবে তিনি যোগ দেননি। রাকসু নির্বাচন রাজনৈতিক হয়ে ওঠা দেখে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি মনে করেন, ছাত্র সংসদের নির্বাচন রাজনৈতিক হয়ে ওঠা ঠেকাতে হবে।'
নারী ভিপি প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি নারী বা পুরুষ প্রার্থী হিসেবে পরিচিত হতে চাইনা।।আমি আমার কাজের মাধ্যমে পরিচিত হতে চাই যা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজে লাগবে।'
রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১৪ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তাতে বিজয়ীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিপি ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে কোনো নারী ছিলেন না।
কোনো নারী প্রার্থী হয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে ১৯৮৮-৮৯ মেয়াদের রাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাগীব আহসান মুন্না গণমাধ্যমে বলেন, তার জানামতে এ পর্যন্ত কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে দাঁড়াননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। রাকসু যাত্রা শুরু করে ১৯৬২ সালে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে। ওই বছর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রুহুল কবির রিজভী (এখন বিএনপি নেতা)। জিএস হয়েছিলেন রুহুল কুদ্দুস (জাসদ ছাত্রলীগ নেতা)।
রাকসুর ভোট গ্রহণ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।