গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স টিকার মার্কিন পেটেন্ট অর্জন, দেশের ওষুধশিল্পের ইতিহাসে প্রথম

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড তাদের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা 'বঙ্গভ্যাক্স'-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অর্জন করেছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে দেশের ওষুধশিল্পে অর্জিত প্রথম মার্কিন পেটেন্ট।
আজ রোববার গ্লোব বায়োটেকের কার্যালয়ে এ অর্জনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্লোব বায়োটেকের গবেষক ড. কাকন নাগ বলেন, এমআরএনএ ভিত্তিক একমাত্র সিঙ্গেল ডোজ ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স। ১৬৫ টি দেশ টিআরআইপিএস এর আইন মানতে বাধ্য। আগামী বছর নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ টিআরআইপিএস সুবিধা পাবে৷ বঙ্গভ্যাক্সের ইউএস প্যাটেন্ট একটি দরজা খুলে দিয়েছে, এখন আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য ওষুধও তৈরি করতে পারবো এবং তা বাধাহীন ভাবে অন্য দেশে রপ্তানী করতে পারবো।'
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সালে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিল ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চরক্তচাপ ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় বায়োলজিক্স, নোভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার তৈরি। ২০২০ সালে যখন বিশ্বজুড়ে মহামারির প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে, তখন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা ড. কাকন নাগ ও ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করেন।
তিনি আরো বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে এমআরএনএ ছাড়াও ডিএনএ, সাবইউনিট/প্রোটিন, ইনঅ্যাকটিভেটেড ভাইরাস, রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাস ভ্যাকসিনসহ ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, ব্লাড ডিসঅর্ডারের মতো দুরারোগ্য রোগের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে। এজন্য ওষুধ শিল্পে নেতাদের এবং সরকারের সহায়তা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাচার বলেন, 'মাঙ্কি ট্রায়ালের সাথে আমি সরাসরি ছিলাম। আমরা দেখেছি সিঙ্গেল ডোজে যথেস্ট পরিমান টাইটার বা অ্যান্টবডি তৈরি করতে সক্ষম। সরকারকে যদি এ গবেষণার অংশিদারিত্ব করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো হতো।'
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির ট্রেজারার হালিমুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশেরে ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিগুলো ব্যাসিক রিসার্চ কম করি। কারণ হলো- সময় ও অর্থ। ব্যাসিক রিসার্চ করার সক্ষমতা অধিকাংশ ফার্মাসিটিক্যালসের নেই। গ্লোব একটা পথ দেখিয়েছে। গ্লোবের দেখানো পথ ধরে আমরা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি আলো দেখতে পাচ্ছি। এটি শুধু ভ্যাকসিন নয় এই টেকনোলজি ইউজ করে ওষুধ উৎপাদন করা যাবে। ইটস অ্যান অ্যাসেট।'
গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চেয়ারম্যান বলেন, 'করোনা শুরুর পর পর আমরা এ ভ্যাকসিনের কাজ শুরু করি। কিন্তু আমাদের দেশ যখন ট্রায়ালের পারমিশন না দেয় তাহলে কিভাবে ডাব্লিউএইচও-তে জমা দিবো? ইউএস এ এক সপ্তাহে ট্রায়ালের পারমিশন দিয়েছে। সে পারমিশনে আমাদের একবার ছয় মাস এবং আরেকবার এক বছর সময় দিয়েছে। আমাদের কপালে ছিলোনা আসলে। তবে আমরা হাল ছাড়িনি, ইউ এস প্যাটেন্ট পেয়েছি। এ টেকনোলজি দিয়ে অনেক কিছু করা যাবে।'