জাকসু নির্বাচন: ভোট গণনায় দেরি কেন?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের একদিন পরও এখনো শেষ হয়নি ভোট গণনা।
আজ শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ২১টি হলের মধ্যে তিনটি হলের ভোট গণনা চলছে। হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হলে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হবে৷
নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোট গণনা শেষে ফলাফল পেতে রাত ১০টা থেকে ১১টা বাজতে পারে।
ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রতা ও বিলম্ব হওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম নির্বাচন কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন।
তিনি জানান, শুরুতে ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট গণনার প্রস্তুতি থাকলেও প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ম্যানুয়াল (হাতে) পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হয়। এ ধরনের গণনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি সময় লাগে।
দ্বিতীয়ত, নির্ধারিত সময় সকাল ৯টার কিছু পর কয়েকটি হলে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং দুয়েকটি হলে ভোটগ্রহণ কিছু সময়ের জন্য স্থগিতও ছিল। বিশেষ করে দুটি বড় হলে দুপুর পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বিকেলে হঠাৎ ভিড় বেড়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, লাইনে আসা সব ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে গিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
তৃতীয়ত, হঠাৎ করে ম্যানুয়াল গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুরুতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা না থাকায় গণনার গতি ছিল ধীর। তবে পরবর্তীতে সেই গতি কিছুটা বাড়ে।
চতুর্থত, শুরুতে সিনেট ভবনে ৫টি টেবিলে ভোট গণনা শুরু হয়, যেগুলো সিসিটিভির আওতায় ছিল। পরদিন সকালে টেবিল সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয় এবং সেগুলোকেও সিসিটিভির আওতায় আনা হয়, যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
পঞ্চমত, রাতে বেশিরভাগ হলে পোলিং কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও অনেক পোলিং এজেন্ট অনুপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের উপস্থিতিতেই ব্যালট বক্স খোলা ও ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সময় লেগে যায়, যা দেরির আরেকটি কারণ।
অন্যদিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য লুৎফুল ইলাহী বলেন, ভোট গণনায় দেরি হওয়ায় সকালের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় একজন সহকর্মীর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে এবং দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত নামাজের বিরতির কারণে ভোট গণনা থেমে ছিল। কিছু হলে দুইটি ব্যালট বক্স থাকায় কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের ব্যালট আলাদাভাবে শনাক্ত করতে সময় লেগেছে।
এবারের নির্বাচনে জাকসু ও হল সংসদের ৩৪০টি পদের বিপরীতে ৬২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে হল সংসদের ৩১৫টি পদের মধ্যে ১৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং ৬৮টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ১৩২ জন ছাত্র ও ৪৫ জন ছাত্রী।
নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়েছে ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয়।