জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ১৬ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২১ নম্বর (সাবেক শেখ রাসেল) হলে মধ্যরাতে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলটির ৪০৩ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা একই বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক অফিস আদেশে জানানো হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের নির্দেশে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২০১৮'-এর ধারা ৪(১)(খ) অনুযায়ী অভিযুক্ত ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন মো. তানভীর রহমান মুন, মো. আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ, মো. আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, এস. এম. মাহামুদুন্নবী, মো. আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহম্মেদ আরেফিন রাতুল, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, মো. মাহামুদুল হাসান ফুয়াদ, মো. আল হাসিব, মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. রাকিবুল হাসান নিবির, মো. জাহিদুল ইসলাম এবং উশান্ত ত্রিপুরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে রবিবার (১২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম ও ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনকে অবহিত করে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে যান। এসময় ২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী, আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবরার শাহরিয়ার এবং হলের দুই কর্মচারীসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্ষটির বাইরে একজন শিক্ষার্থী পাহারায় ছিলেন। তিনি ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। পরে দরজা-জানালা বন্ধ কক্ষে প্রবেশ করলে দেখা যায় নবীন শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একপাশে রাখা হয়েছে। নবীনরা ভয়ে কোনো কথা বলেনি।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দাবি করেন, 'নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করছিলাম; পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল।' অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের একজন তানভীর বলেন, 'র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা শুধু নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলছিলাম।'
তবে ২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী বলেন, 'আমরা গিয়ে দেখি দরজা-জানালা বন্ধ করে জুনিয়রদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তারা ভীত ছিল এবং তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, হল সংসদের প্রতিনিধি, প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার ভাষ্যমতে এখানে র্যাগিংয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, 'আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি এবং হল প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর ড. মো. আল-আমিন খান এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ। কমিটিকে আগামী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।