সংসদীয় আসনসীমা পুনর্নির্ধারণে ফরিদপুরে চতুর্থ দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ, বাগেরহাটে দ্বিতীয় দিনের হরতাল

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা। এর ফলে ঢাকার সাথে ২১টি জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়ন ও হামিরদী ইউনিয়ন সীমানাবর্তী সুয়াদী বাসস্ট্যান্ড ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ডসহ প্রায় ১০টি স্থানে গাছ কেটে ও ট্রায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয়রা। এ সময় দুটি মহাসড়কের প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবার গারি ব্যাতিতন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
অবরোধকারীরা জানান, 'গত ১১৮ বছর যাবত আমরা ভাঙ্গা উপজেলার সাথে সংযুক্ত রয়েছি। ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আমরা ভাঙ্গা উপজেলাবাসী এক আত্মার বন্ধনে এক পরিবার। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। নির্বাচন কমিশনের এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে যতক্ষণ সরে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হবে।'

এখন আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও, সামনে আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফ বলেন, 'দুটি মহাসড়কে রাস্তায় গাছ কেটে ও ট্রায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয়রা। এখনো বরিশাল মহাসড়কটি যানবাহন চললেও যে পরিস্থিতি, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে দুটি ইউনিয়ন ভাঙ্গা থেকে নগরকান্দায় যুক্ত হওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।'
উল্লেখ্য, এর আগে গত শুক্রবার এবং পরবর্তীতে মঙ্গলবার ও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার সাথে দক্ষিণবঙ্গের পুরোপুরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় অবরোধকারীরা। এতে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ব্যাপকহারে বেড়েছে। তারা অতি দ্রুত এর একটি সমাধান চান সরকারের কাছে।
এদিকে, চলমান অবরোধের কারণে রেল চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।ভভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের সহকারী ম্যানেজার মোহাম্মদ সাকিব আকন্দ জানান, খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ভাঙ্গায় সোয়া আটটায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু রেললাইন অবরোধের কারণে ট্রেনটি ভাঙ্গা পৌঁছতে পারেনি। গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর এলাকায় অবস্থান করছে।
ভাঙ্গা রেল পুলিশের ইনচার্জ শাবুর হোসেন বলেন, 'ঢাকাগামী জাহানাবাদ ট্রেন মুকসুদপুর আটকা পড়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবরোধকারীদের শান্ত না করা পর্যন্ত রেল চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা খুলনা ট্রেন চলাচল পথ বন্ধ রয়েছে।'
বাগেরহাটে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে হরতাল
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি বহাল রাখার দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের হরতাল চলছে। আঃজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, বেঞ্চ পেতে, বাস দাঁড় করিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করছেন হরতালের সমর্থনকারীরা।
সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির দাবি, জেলার বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১৩৪ টি স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। যার ফলে বাগেরহাট জেলা কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

এদিকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, দড়াটানা সেতুর দুইপাশ, ফতেপুর বাজার, সিএন্ডবি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকের লম্বা সারি দেখা গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অন্যদিকে হরতালের সমর্থনে বাগেরহাট জেলাজুড়ে দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন।
বুধবার সকালে শুরু হওয়া হরতালের সমর্থনে রাতেও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখেন হরতালের সমর্থনকারীরা। সাধারণ মানুষ বলছেন, রাতে সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
গত ৩০ জুলাই দুপুরে নির্বাচন কমিশন থেকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করেন। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন তারা।
এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন বহাল রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসনবিন্যাস গণ মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে হরতালে বাগেরহাটের সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ইপিজেড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-ক্যানেল দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী পারাপারের খেয়া ট্রলার বন্ধ থাকায় নদীর দুই পাড়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অপেক্ষায় শত শত শ্রমিক ও যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। পূর্বের সীমানা: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।