খাতুনগঞ্জে ব্যবসায় সংকট, সংস্কারের আহ্বান ব্যবসায়ীদের

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক বাজার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
তাদের দাবি, গত ১৫ বছরে খাতুনগঞ্জে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং বৈষম্যমূলক নীতি ও অযৌক্তিক জটিলতায় সৎ ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন। এতে গত কয়েক বছরে একশ'রও বেশি ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়েছেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে 'খাতুনগঞ্জের সংকট ও চ্যালেঞ্জ: বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের অপূর্ণতা নিরসন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয়' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. আবদুস সালাম এবং সঞ্চালনা করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম আজাদ।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সরকারি সংস্থার অডিট ও তদন্তের নামে তারা হয়রানির শিকার হন। কোনো বিষয়ে দ্বিতীয়বার কথা বললে দ্বিগুণ জরিমানার মুখে পড়তে হয়। এতে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর পারভেজ বলেন, "চট্টগ্রামকে সুপরিকল্পিতভাবে অবহেলিত রাখা হয়েছে। আগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে এসে পণ্য কিনতেন। এখন যেন সচেতনভাবে চট্টগ্রামকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলের কারণে ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এখানে ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না, অথচ দেশের অন্য কোনো মহাসড়কে এমন নিয়ম নেই। অনেকের দাবি আদায় হলেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান বলেন, "আমরা বহুবার সরকারি দপ্তরে গিয়েছি সমাধান চাইতে, কিন্তু পাইনি। উৎপাদন সংকট, আন্তর্জাতিক বাজার বা পরিবহন খরচের কারণে পণ্যের দাম বাড়লেও মিডিয়া আমাদের 'অসাধু ব্যবসায়ী' আখ্যা দেয়। এ ধরনের গ্লানি নিয়েই ব্যবসা করতে হয়।"
সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, "এলসি করতে গেলে প্রায়ই বলা হয় খাতুনগঞ্জে সবাই ডিফল্টার। অথচ খাতুনগঞ্জের সব ডিফল্টার মিলে ঢাকার এক শতাংশও হবে না। দেশের বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর শিকড় এই খাতুনগঞ্জেই।"
তিনি আরও বলেন, "ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল খাতুনগঞ্জের ব্যবসার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অন্য কোথাও এমন স্কেল নেই, অথচ এখানে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যত্র প্রয়োগ করা হলে আমরা মানব, কিন্তু বৈষম্য মেনে নেব না।"
প্রধান অতিথি ইসরাফিল খসরু বলেন, "দেশে যেমন গণতন্ত্র প্রয়োজন, ব্যবসাতেও গণতন্ত্র দরকার। দীর্ঘদিন ধরে কিছু মানুষের হাতে ব্যবসা জিম্মি ছিল। সৎ ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাননি, বরং হয়রানির শিকার হয়েছেন। একটি ট্রেড লাইসেন্স পেতেও তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর অযৌক্তিক ব্যয়ের কারণে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ী থাকলেও তার মানে এই নয় যে সব ব্যবসায়ী খারাপ। সৎ ও যোগ্য ব্যবসায়ীদের প্রাপ্য সহায়তা দেওয়া উচিত। আমি নিজেও রাজনৈতিক কারণে ব্যাংক ঋণ পাইনি। আমরা দায়িত্ব পেলে এমন পরিবেশ তৈরি করব, যেখানে নিয়ম মেনে ব্যবসা করলে রাষ্ট্র তাকে সহযোগিতা করবে।"
ইসরাফিল খসরু অভিযোগ করে বলেন, "চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও বাস্তবে তেমন উন্নয়ন হয়নি। শুধু মুখে নয়, কাজে বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদা দিতে হবে। অসাধুদের কারণে সব ব্যবসায়ী যেন গ্লানির শিকার না হন, সেটিই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।"