চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সুন্নি সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক, ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গতরাতে (৬ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সুন্নি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন। বিতর্কিত একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুস র্যালি থেকে ফেরা সুন্নি অনুসারীদের কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পালাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।"
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তপন কান্তি বলেন, "রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা প্রায় ৮০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায়, তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।"
এদিকে নতুন করে অস্থিরতা এড়াতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন এলাকায় গতরাত ১০টা থেকে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।
ইউএনওর জারিকৃত আদেশে বলা হয়েছে, হাটহাজারীর মীরেরহাট থেকে ইলেভেন মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত এলাকায় পাঁচজনের বেশি লোকের সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিস্ফোরক বা আগ্নেয়াস্ত্র বহন এবং যেকোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে।

এর আগে, দিনেই ওই সহিংসতার সূত্রপাত ঘটানো ফেসবুক পোস্টের অভিযোগে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিয়ান ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি জশনে জুলুসে যোগ দিতে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসা মসজিদের সামনে অশ্লীল ভঙ্গির ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেন। মুহূর্তের মধ্যে পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ইউএনওর নির্দেশে হাটহাজারী থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, জশনে জুলুস চলাকালে সুন্নি অনুসারীদের ওপর হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এমএ মতিন ও মহাসচিব আল্লামা এসইউএম আব্দুস সামাদ হামলাকারীদের 'উগ্র জঙ্গি' আখ্যা দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের মুসলিমরা যখন শ্রদ্ধাভরে ১৫০০তম মিলাদুন্নবী পালন করছে, তখন একদল উগ্রপন্থী হাটহাজারীতে ধর্মপ্রাণদের ওপর হামলা চালিয়েছে; তাদের ওপর এমনকি গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। এ ধরনের নৃশংসতা প্রকৃত মুসলমানের কাজ হতে পারে না। যারা মিলাদুন্নবীর বিরোধিতা করে তারা শুধু অশান্তি ও রক্তপাত ছড়ায়। শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের টার্গেট করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং ১৪৪ ধারা চলমান রয়েছে।
১৪৪ ধারা কী?
দণ্ডবিধি ১৮৯৮ (সিআরপিসি) এর অধীন ১৪৪ ধারা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এই ধারা জারি থাকাকালে জনসমাগম বা মিছিল-সমাবেশে অংশ নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এর আওতায় বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।