আগামী বছর থেকেই পটুয়াখালী ইপিজেডে শিল্প প্লট বরাদ্দ শুরু

পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকেই বিনিয়োগকারীদেরকে শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
বেপজার জনসংযোগ নির্বাহী পরিচালক এএসএম আনোয়ার পারভেজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০২৬ সালের জুনের মধ্যে উন্নয়নকাজ শেষ হবে। তবে ২০২৬ সালের শুরু থেকেই প্লট বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। একইসঙ্গে জমি উন্নয়ন ও কারখানা নির্মাণকাজ চলতে থাকবে।"
তিনি আরও জানান, পাশের পায়রা সমুদ্রবন্দর সম্পন্ন হলে দ্রুত আমদানি-রপ্তানির সুবিধা পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের সুবিধা পাবেন।
নতুন এ অঞ্চলের জন্য বেপজা উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ১,৫৩০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বছরে ১,৮৩৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের পরিকল্পনা করছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৪১০.৭৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৪০ একর এলাকায় মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। এখানে ৩০৬টি শিল্প প্লট তৈরি হবে।এখানে প্রত্যক্ষভাবে এক লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরও দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে বেপজা।
বেপজা সূত্র জানায়, পুনর্বাসন এলাকায় ১৫৪টি ঘর, স্কুল, মসজিদ, পুকুর, রাস্তা ও ড্রেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। পাশাপাশি অফিস ভবন, কাস্টমস ভবন, সিকিউরিটি ব্যারাক, সাবস্টেশন, প্রধান সড়ক, সীমানা দেওয়াল ও জলাধার নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে।
বেপজার জনসংযোগ নির্বাহী পরিচালক এএসএম আনোয়ার পারভেজ বলেন, "কাস্টমস অফিস ভবনের কাজ চলছে। ছয়তলা জোন অফিস ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। সিকিউরিটি ও আনসার ব্যারাকের কাজও এগোচ্ছে।"
প্রকল্পের আওতায় চারটি ছয়তলা কারখানা ভবন, তিনটি ১০ তলা আবাসিক ভবন, সাবস্টেশন, সিইটিপি, এসটিপি নেটওয়ার্ক, হেলিপ্যাড এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কেন্দ্রীয় জলাধার নির্মাণ করা হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য কুয়াকাটায় আট একর জমিতে একটি রিসোর্ট কাম ইনভেস্টরস ক্লাব গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। ইতোমধ্যে ইপিজেড এলাকায় খাল উন্নয়ন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব সাইফুল্লাহ পান্না প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যারা এখানে ব্যবসা শুরু করবেন, তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে।"
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৪৪২.৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকার দেবে ১,১০৫ কোটি টাকা (যার ৪০ শতাংশ মূলধনী বিনিয়োগ) এবং বাকি প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা আসবে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এটি হবে প্রথম ইপিজেড। স্থানীয়দের আশা, এ প্রকল্প চালু হলে বেকারত্ব কমবে। ঢাকায় না গিয়েও মানুষ বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ পাবেন। পটুয়াখালীর মহিউদ্দিন মাহি বলেন, "শুধু আমাদের এলাকা নয়, বরিশালসহ আশপাশের জেলার মানুষও এখানে কাজের সুযোগ পাবেন।"
বর্তমানে চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা ও ঈশ্বরদীসহ আটটি ইপিজেড পরিচালনা করছে বেপজা।