চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে গুরুতর আহত সায়েমের জ্ঞান ৪৮ ঘণ্টায়ও ফেরেনি

সিটিস্ক্যান করতে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থেকে লাইফ সাপোর্টসহ বের করা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমকে।
মাথায় ব্যান্ডেজ, মুখে অক্সিজেন সাপোর্ট, চেনার উপায় নেই। সঙ্গে সঙ্গে মা শাহানাজ আমীর বিলাপ করে উঠলেন, 'এই যে আমার সায়েম। কত সুন্দর ছিল। এখন চেনা যাচ্ছে না!'
এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সায়েমের সহপাঠীরা তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন।
অন্যদিকে, ৪৮ ঘণ্টায়ও জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের। চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে মাথার বড় অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনি।
চিকিৎসক বলছেন, পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই।
সায়েমের বাবা মোহাম্মদ আমীর হোসেন রবিবার সকালে বগুড়া থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান। তার সঙ্গে স্ত্রী ও আরেক ছেলেও হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
আমীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'চিকিৎসকরা বলেছেন সায়েমের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ। সংঘাত যখন চলছিল, রোববার দুপুরে তার সঙ্গে পরিবারের সবার কথা হয়েছিল। পরিবারকে জানিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিল সায়েম। তাকে নিষেধ করা হয়েছিল, মারামারিতে না যেতে। কিন্তু এরপর শুনি, সে আহত।'
সায়েম ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালটির আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শের্ষ বষের ছাত্র মামুন মিয়া। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তার মাথার গুরুতর খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। তবে তার জ্ঞান ফিরেছে। অবস্থারও উন্নতিও হয়েছে।
আইসিইউ'র বাইরে মেঝেতে অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ভাই টাঙ্গাইলের একটি প্রাথমিক বিদ্যায়ের শিক্ষক মাসুদ রানা।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'মামুন আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে কেবিনে দেওয়া হবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।'
পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ সিরাজুল মোস্তফা টিবিএসকে বলেন, 'সায়েমের মাথায় বড় ধরনের অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ফেটে গেছে। মস্তিস্কে আঘাত পেয়েছে ও রক্তনালী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। শুধু ব্লাড পেশারের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সবমিলে অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।'
তিনি বলেন, 'এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা দেরিতে রেসপন্স করেন।'
মামুন মিয়াকে আগামীকাল কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তার অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। মাথার খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। সুস্থ হলে দুই থেকে আড়াই মাস পরে মাথার খুলি লাগানো হবে।'
এদিকে আরেক গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলামকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার ডান হাতে অস্ত্রোপাচার হয়েছে।
তার সঙ্গে থাকা আরেক শিক্ষার্থী আদনান শরিফ আসিফ টিবিএসকে বলেন, 'নাইমুলের ডান হাতের কবজি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তনালী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে সম্ভব না হওয়ায় তাকে ঢাকায় এনে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছিল। এরপর তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। তবে আজ আবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'চিকিৎকরা বলছেন, আরও পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। অবস্থার উন্নতি হলে ১৫ থেকে এক মাস পর রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আরেকটি অস্ত্রোপাচার হওয়ার কথা রয়েছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢোকাকে কেন্দ্র এক ছাত্রীকে চড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে দারোয়ানের বিরুদ্ধে। এটিকে কেন্দ্র করে শনিবার গভীর রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
পরদিন রবিবার সকালে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। দেশীর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। প্রশাসনের দাবি, ৪০০ থেকে ৫০০ জন আহত হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে তিন শতাধিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১১৪ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন এ পর্যন্ত।