হল বন্ধের প্রতিবাদে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ও ছয় দফা দাবি

কম্বাইন্ড বা সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যসহ আড়াইশ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
হল ছাড়ার নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার সকালে অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলনে নেমেছেন।
সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে কে আর মার্কেটে এসে পৌঁছান। সেখানে ছাত্রীদের প্রতিটি হলের সামনে তারা 'আমার বোনের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই' স্লোগান দেন।
এরপর তারা সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো, অবৈধভাবে হল খালি করার নির্দেশনা বেলা দুইটার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে, হলগুলোয় চলমান সব ধরনের সুবিধা (পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস) নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে, এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর, দেশি অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এক মাস ধরে চলমান যে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে, তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ছয় দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করেন তারা।
তবে বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলার বিষয়ে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে বাকৃবি উপাচার্য বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলব?'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের সিংহভাগ শিক্ষার্থী কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে আন্দোলন করা অবস্থায় গতকাল রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে, গতকাল বেলা ১১টায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগের মতো 'বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি' ও 'ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন'-এর (ডিভিএম) পাশাপাশি কম্বাইন্ড ডিগ্রিও চালু থাকবে।
শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেন এবং বাকৃবি উপাচার্যসহ প্রায় শিক্ষককে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে উপাচার্যের বাসভবনের দিক থেকে অর্ধশত বহিরাগত তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে সেখান থেকে চলে যান।