‘হরে কৃষ্ণ হরি বোল, দাঁড়িপাল্লা টাইনে তোল’: ব্যতিক্রমী স্লোগানে জামায়াত প্রার্থীর প্রচারণা শুরু
'হরে কৃষ্ণ হরি বোল, দাঁড়িপাল্লা টাইনে তোল'-ব্যতিক্রমী এই স্লোগান দিয়েই খুলনা-১ আসনে ভোটের মাঠ গরম করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে বটিয়াঘাটা এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি।
কৃষ্ণ নন্দী জামায়াতে ইসলামীর ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। সম্প্রতি দলটির পক্ষ থেকে তাকে এই আসনে নতুন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রার্থী ঘোষণার পরপরই তার এই স্লোগান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ধর্মীয় আবহমান চেতনা আর জামায়াতের রাজনৈতিক প্রতীক 'দাঁড়িপাল্লা'কে মিলিয়ে তৈরি করা এই স্লোগান নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভোটারদের অনেকে বলছেন, কৃষ্ণ নন্দীর এই স্লোগান এলাকার হিন্দু ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় আবেগ তৈরি করছে এবং প্রচারণায় নতুনত্ব এনেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতের প্রার্থী হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতার এমন স্লোগান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে নানান হিসাব-নিকাশ। কেউ এটিকে 'কৌশলী প্রচারণা' বলছেন আবার কেউ ভোটারকে প্রভাবিত করতে ধর্মীয় উপাদান ব্যবহারের সমালোচনা করছেন।
এ বিষয়ে প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী বলেন, 'আমি সব সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমার স্লোগান কোনো বিভাজন নয় বরং শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ডাক। আমার নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যই হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া।'
খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মিজানুর রহমান বলেন, 'কৃষ্ণ নন্দীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য দল থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির নেতৃবৃন্দ তাকে নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রথম দিনেই আমরা এলাকার মানুষের ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া পেয়েছি।'
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। তবে বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে প্রচারণার সুবিধার্থে তিনি এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'নির্বাচিত হতে পারলে ওই এলাকায় বাড়ি বানাব, যাতে এলাকার মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারি।'
খুলনা-১ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের 'ঘাঁটি' হিসেবে পরিচিত। এই আসনে সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রভাব বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাই এখানে জয়লাভ করে আসছেন। ১৯৭৩ সালে কুবের চন্দ্র বিশ্বাস, পরবর্তীতে প্রফুল্ল কুমার শীল, পঞ্চানন বিশ্বাস এবং ননী গোপাল মণ্ডল এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনোই এই আসনে জিততে পারেনি। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান এখানে সবসময় দুর্বল ছিল। তবে এবার হিন্দু প্রার্থী দিয়ে এবং ব্যতিক্রমী প্রচারণার মাধ্যমে জামায়াত নতুন সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করছে।
