আ.লীগের মতো জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে: প্রধান উপদেষ্টাকে ডা. তাহের

আওয়ামী লীগের যেমন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে তেমনি জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি— জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দোসর ছিল। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, একই ধরনের সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির ব্যাপারেও নেওয়া যেতে পারে।'
তাহের বলেন, 'গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপরে যেভাবে হামলা হয়েছে তা ন্যক্কারজনক, দুঃখজনক বলাতে কাভার করে না। নুরের ওপরে হামলা হয়েছে, এর ষড়যন্ত্র গভীরে। এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।'
আজ (৩১ আগস্ট) রোববার বিকেলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, '৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর চায়। বাম দলগুলো ও ইসলামি দলগুলোও পিআর চায়। অধিকাংশ দল যেহেতু পিআর চায়, সেটা করতে হবে।'
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্পর্কে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, 'আনফরচুনেটলি অল্প কিছু দল সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। প্রধানত একটি দলই বাধা দিচ্ছে। তারা বলছে, আগামী নির্বাচিত সরকার এসে এটা বাস্তবায়ন করবে। আমরা তাহলে এই সরকারের আমলে কেন আলোচনা করলাম?'
সেই দলটির নাম জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আপনাদের স্বউদ্যোগে সেটি জানতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা শুধু ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু এর আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু দল বাধা দিচ্ছে। যদি সেটা না হয়, তাহলে শহীদ ও পঙ্গুদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। তাই আমরা বলেছি, সনদের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন হতে হবে।'
সৈয়দ তাহের বলেন, 'সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য এখনো অনেক সময় বাকি আছে। সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেকটি দলকে তার নেতাকর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দখলদারদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা কেউ দেখাতে পারবে না। তাহলে নির্বাচনের মতো গুরু দায়িত্ব কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? মনে হচ্ছে কোথাও থেকে নীলনকশা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এটা হতে দেওয়া হবে না।'
তিনি বলেন, 'সরকার মনে হয় যেন হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা বলেছি, আপনারা এতোদিন যা ছিলেন এখন আরও কঠোর হতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকারের উচিত ছিল জুলাই সনদে এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এটা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত। একটা দল যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই হচ্ছে। বাকি আমরা সব দল একসাথে আছি। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি ক্ষুণ্ন হয়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। প্রতিনিধি দলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. হামিদুর রহমান আযাদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্যানুসারে, আজ সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিটে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং এতে দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বৈঠকের এজেন্ডা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির একটি সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানায়, আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদ নিয়ে কথা হবে বলে দলটি জানতে পেরেছে।
এনসিপি আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি দলে থাকবেন প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
নির্বাচনের সময়সীমা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধের মধ্যেই এই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।