বড় দলগুলো এসপি-ডিসি পদগুলো ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর নাহিদ

বড় রাজনৈতিক দলগুলো জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারের মতো পদগুলো ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ দাবি করেন।
নাহিদ বলেন, আমরা জেনেছি বিভিন্ন দল প্রশাসনে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে। বড় দলগুলো এসপি-ডিসি পদগুলো ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হবে। সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে চলে এবং উপদেষ্টা পরিষদের যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ কমিশনের দরকার উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'জনপ্রশাসের যে পদায়ন হচ্ছে, তা কীসের ভিত্তিতে হচ্ছে? নিরপেক্ষতা নাকি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে?'
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সেনাসদস্যদের আদালতে হাজির করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, 'আমরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছি। সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। ন্যায়বিচারের একটি ধাপে আমরা এগোচ্ছি।

জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারের পক্ষ থেকে জুলাই গণহত্যার জন্য সারাদেশে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেই মামলাগুলিতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান নাহিদ। তিনি বলেন, পত্রিকায় আমরা দেখতে পাচ্ছি জামিনে আসামিরা ছাড়া পাচ্ছেন এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের হুমকি দিচ্ছেন। শহীদ ও আহত পরিবারের নিরাপত্তা এবং বিচারের একটি রোডম্যাপ আমরা চেয়েছি। নির্বাচনের আগে বিচারের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক—এটাই আমাদের দাবি।
জুলাই জাতীয় সনদে এনসিপির স্বাক্ষর না করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'জুলাই সনদের শুধু কাগজে মূল্যে আমরা বিশ্বাসী নই। জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে—সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর আমরা স্বাক্ষর করব।'
তিনি বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটি সাংবিধানিক আদেশের কথা বলেছি, যে আদেশ অধ্যাপক ড. ইউনূস প্রধান হিসেবে জারি করবেন। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের যে সার্বভৌম ক্ষমতা, সেটির একমাত্র বৈধতা ড. ইউনূসের আছে। সেই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে নেই।
আজ বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছায় এনসিপির শীর্ষস্থানীয় চার নেতা। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টায় জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকে তা বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর অবস্থানের ভিন্নতার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন।