সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কার্জনসহ ২ জনের জামিন নামঞ্জুর

রাজধানীর শাহবাগ থানায় দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জনসহ দুই জনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার (৩১ আগস্ট) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুবের আদালত এ আদেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া অপর আসামি মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩)।
এদিন আসামিদের পক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন (রাখী) তাদের জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, 'আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ, নিরপরাধ। এই মামলায় তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'হাফিজুর মূলত প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশের জুডিসিয়াল কাউন্সিলে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও পুলিশ স্টাফের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব।'
তিনি আরও বলেন, 'গত ২৮ আগস্ট 'মঞ্চ ৭১' কর্তৃক আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান বিষয়ক আলোচনা সভায় যোগদান করলে অতর্কিতভাবে কিছু মব সৃষ্টিকারীরা তাদেরকে আক্রমণ করেন। এরপর পুলিশ তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখান।'
শুনানিতে এই আইনজীবী আরও উল্লেখ করেন, 'আসামি আব্দুল্লাহ আল উত্তরা জুট মিলসে কর্মরত। আসামি ৭৩ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি এবং শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ। তিনি এই জামিনের হকদার। সার্বিকদিক বিবেচনায় আসামির জামিনের প্রার্থনা করছি।'
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, 'গত বছরের ৫ অগাস্ট স্বৈরাশাসক হাসিনার বিদায় হয়। সেই দিনই তারা '৭১ মঞ্চ' প্রতিষ্ঠা করে। তাদের উদ্দেশ্য হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা। '৭১ মঞ্চ'- এর সঙ্গে জড়িত জেড আই খান পান্না, লতিফ সিদ্দিকী, তার ভাই কাদের সিদ্দিকী। এরা প্রত্যেকে আওয়ামী লীগার। এরা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে ছিল। কেউ অভিমানে, আবার কেউ বহিষ্কার হয়ে চুপ ছিলেন। তাদের এই মঞ্চের উদ্দেশ্য হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ এদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তারা আর ফিরতে পারবে না। তারা যে স্বপ্ন দেখে তা দুঃস্বপ্ন হবে। তাদের জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।'
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। আসামিরা কারাগারে থাকা অবস্থায় এই মামলায় জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, গত ২৯ আগস্ট এ মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান (কার্জন), মো. আব্দুল্লাহ আল আমিনসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন-সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল, গোলাম মোস্তফা, মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু, মো. জাকির হোসেন, মো. তৌছিফুল বারী খাঁন, মো. আমির হোসেন সুমন, মো. আল আমিন, মো. নাজমুল আহসান, সৈয়দ শাহেদ হাসান, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মোহম্মদ আলী ও মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ অগাস্ট 'মঞ্চ ৭১'- নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগনকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট সকাল ১০ টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
ওইদিন সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন।
এসময় তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন। তারা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম।